অগ্রিম আয়কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এবং দেশীয় সিমেন্ট কোম্পানি ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলমগীর কবির। কথা বলেছেন ফখরুল ইসলামসুজয় মহাজন।

আলমগীর কবির, সভাপতি, বিসিএমএ

প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বাজেটের আকার বড়, তবে ঘাটতি অনেক বেশি। ঘাটতি পূরণের জন্য যে ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা অনেকাংশই অবাস্তব মনে হয়েছে। ঘাটতি পূরণের জন্য আর্থিক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারল্য সংকটও দেখা দিতে পারে।

সার্বিকভাবে আমার মনে হয়েছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক খাতকে। দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য ব্যাপক সুবিধা রাখা হয়েছে।

আমরা সাধারণত নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা করি। এ খাতে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন নজরে আসেনি। ইস্পাতের কাঁচামালের ক্ষেত্রে ভ্যাট ২০০ টাকা কমানোর প্রস্তাব রাখা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্যের বিবেচনায় দেশের বাজারে পণ্যের দামে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ, কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ব্যয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রাকে টাকায় হিসাব করে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট নির্ধারিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্যাট কমানোর সুফল না–ও পাওয়া যেতে পারে।

বাজেটে ২ শতাংশ করপোরেট কর কমিয়ে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফার ওপর প্রথমেই সাড়ে ২২ শতাংশ করপোরেট কর এবং একই মুনাফা বা লভ্যাংশের ওপর ব্যক্তি পর্যায়ে পুনরায় ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে একই মুনাফার জন্য ৪৭ শতাংশ আয়কর দিতে হচ্ছে, যা এখনো অনেক বেশি। দ্বৈত করের কারণে নতুন বিনিয়োগে যথাযথ উৎসাহ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। আমার কাছে মনে হয়, ব্যক্তি পর্যায়ে লভ্যাংশের ওপর কর আরও কমিয়ে আনতে পারলে নতুন বিনিয়োগ গতি পাবে। কারণ, বিনিয়োগের অন্যতম বড় কঠিন বিষয় হচ্ছে ইকুইটি বা মূলধন জোগান দেওয়া।

সিমেন্টশিল্পের জন্য এই বাজেটে নতুন কোনো প্রস্তাবনা পরিলক্ষিত হয়নি। আগে থেকেই কাঁচামালের আমদানি পর্যায়ে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বা এআইটি আদায় করা হচ্ছিল, সেখানেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ এ খাতের কোনো কোম্পানি মুনাফা না করতে পারলেও তাকে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হবে, যা চূড়ান্ত দায় হিসেবে থেকে যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের রাজস্ব বিভাগের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি। আমাদের বিষয়টি সংশোধনের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখিনি। কোনো কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করতে পারে না। তারপরও অগ্রিম আয়কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ ধরনের নীতি শিল্পের বিকাশে অন্তরায়।

আলমগীর কবির : সভাপতি, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)