অনলাইনে বিক্রির ধুম

পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ক্রেতারা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য কিনছেন।

  • ২০২০ সালে দেশে অনলাইনে ১৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়।

  • করোনাকালে ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা যুক্ত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি।

ফাইল ছবি

দেশে অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা বা ই-কমার্স ব্যবসা এমনিতেই দিন দিন বাড়ছিল। করোনার আতঙ্ক সেই গতি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে থাকার জন্য মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটায় ঝুঁকছেন। মানুষের অনলাইননির্ভর কেনাকাটায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব ও ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। করোনায় ফিকে হয়ে যাওয়া জীবনে উৎসবের রং যেন আবার ঝলমল করছে। উৎসবের এ সুবাতাস বইছে অনলাইন কেনাকাটায়। তাতে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তারাও উৎসবে ব্যবহার্য পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন।

ফেসবুকভিত্তিক পোশাকের দোকান পটের বিবির স্বত্বাধিকারী ফোয়ারা ফেরদৌস প্রথম আলোকে জানান, ‘এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে। গতবারের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি কাজ করেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিছু পণ্য একদম স্টক-আউট হয়ে গেছে।’

করোনায় মানুষের অনলাইননির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় বসন্তকে সামনে রেখে অনলাইনে ফুলের ডালি সাজিয়ে বসেছে পাপড়ি ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা কাজী ফৌজিয়া হোসেন জানান, বরাবরের মতো এবারও বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ অফার রয়েছে তাঁদের। এ ছাড়া অনলাইনে ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডে ফুলের তোড়া কিনলে রয়েছে ১৫ শতাংশ ছাড়। কাজী ফৌজিয়া আরও বলেন, ‘করোনার মধ্যেও ঘরবন্দী অনেক মানুষ প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিতে অনলাইনকে বেছে নিয়েছিলেন। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করেও এখন পর্যন্ত আমাদের বিক্রি ভালো।’

অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও পণ্য বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এবার একক কোনো কোম্পানির বিক্রি বাড়ছে, এমনটা নয়। সবারই কমবেশি বিক্রি বেড়েছে। জানতে চাইলে অনলাইনভিত্তিক দেড় হাজার উদ্যোক্তার সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, গত বছর করোনার কারণে অনলাইনে কেনাকাটা ব্যাপক হারে বেড়েছিল। পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষেও কেনাবেচা বেড়েছে অনলাইনে।

ই-ক্যাবের হিসাবে, বিদায়ী ২০২০ সালে অনলাইনে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে করোনার সময়ই ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা বেড়েছে কয়েক হাজার। তাঁরাও নানা ধরনের বসন্তকে সামনে রেখে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। আবার প্রতিষ্ঠিত অনেক ফ্যাশন হাউসও অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে ঝুঁকেছে।

ফেসবুককেন্দ্রিক টিপ ও গয়না বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আলতাপালিশের স্বত্বাধিকারী সুমাইয়া সাইদ জানান, কেবল বসন্ত উৎসবকে সামনে রেখে তাঁরা তিন মাস ধরে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর তৈরি দুই-তৃতীয়াংশ টিপই বিক্রি হয়ে গেছে। আগে রাঙতা মেলায় টিপ বিক্রি করতেন। এবার কেবল অনলাইনেই বিক্রি করছেন।

নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তার বড় প্ল্যাটফর্ম এটি, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। এই প্ল্যাটফর্মের উপদেষ্টা ও ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজীব আহমেদ জানান, বসন্ত উপলক্ষে এবার গত ১৫ জানুয়ারি থেকে বসন্ত ওয়েভ ক্যাম্পেইন শুরু করেন নারী উদ্যোক্তারা। এতে মানুষ খুব ভালো সাড়া দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিন থেকে চার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটিতে পোশাকের পাশাপাশি নানা ধরনের গয়নার চাহিদা বেশি।

জানতে চাইলে বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সায়ন্তনী তিশা বলেন, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে গ্রাহকেরা উপহারসামগ্রী ও ফ্যাশন আইটেমগুলোকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। উৎসব উপলক্ষে দারাজের এবারের ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন যে পরিমাণ অর্ডার এসেছে, তা আগের ক্যাম্পেইনগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ।

এই খাতের উদ্যোক্তারা আশা করেন, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার যে প্রবণতা ও অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে, তার একটি বড় অংশ ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। ই-কমার্সভিত্তিক অনলাইন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ বলেন, দুটি উৎসব ঘিরে গত দুই-তিন মাসের তুলনায় চলতি মাসে বিক্রি বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় দৈনিক পার্সেল পাঠানোর পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।