আগে জীবন বাঁচাতে হবে, তারপর অন্য কিছু

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নতুন মহাপরিচালক বিনায়ক সেন কথা বলেছেন গবেষকদের ভূমিকা, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী বাজেট নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন

বিনায়ক সেন
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএসের নতুন মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শুরুতেই আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। জানতে চাই দেশের অর্থনৈতিক গবেষণায় বিআইডিএসের প্রভাব বা গুরুত্ব কতটা?

বিনায়ক সেন: বিআইডিএস হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৯ সালে, পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস বা পিআইডিই নামে। তবে আইয়ুব খানের পতনের পরে গণজাগরণের পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া সরকার একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান অন্ততভাবে পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে এটি ছিল করাচিতে। সুতরাং বিআইডিএসের জন্মের সঙ্গে আমাদের জাতীয়তাবাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক যোগসূত্র তখন থেকেই দেখতে পাই। এই প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা দিকপাল অর্থনীতিবিদেরা সে সময় নিজেদের গবেষণার পাশাপাশি দুই অর্থনীতির বৈষম্য নিয়ে কাজ করেছেন, ’৭০-এর নির্বাচন-পরবর্তী শাসনতন্ত্রের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্মাণের কমিটিতেও যুক্ত থেকেছেন। আবার ’৭১-এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের ধানমন্ডির বাসভবন হয়ে উঠেছিল অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার একটি কেন্দ্র। তিনি কিন্তু তখন সরকারি প্রতিষ্ঠান পিআইডিইর চেয়ারম্যান।

স্বাধীনতার পরে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হন। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রথম যে লঙ্গরখানা জরিপ হয়, সেটিও করেছিলেন বিআইডিএসের গবেষক মহিউদ্দিন আলমগীর। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার তৈরির সঙ্গে ছিল বিআইডিএস। এমনকি ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি সমিতি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে যে ক্রিটিক্যাল আলোচনা করেছিল, সেখানেও ছিল বিআইডিএসের গবেষকেরা। তখন কিন্তু তর্কবিতর্কময় জ্ঞানচর্চার একটি পরিবেশ ছিল, যা তৎকালীন সরকার করতে দিয়েছিল। এরপরের ’৭৬ সাল থেকে যদি ’৯০ পর্যন্ত দেখি তাহলে মোটা দাগে বিআইডিএসের অর্থনীতিবিদদের বেশি ছিল সমাজ ও অর্থনীতি চাহিদা অনুযায়ী। পরে বিআইডিএস খুব জোরেশোরে কৃষি, গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করেছে। ২০০০ সালের পরে বিআইডিএসের কাজ আরও অনেক বিস্তৃত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষকদের লেখা ছাপা হচ্ছে। এর ফলও পাওয়া গেছে। গত বছরই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক তালিকায় ১০৪ থেকে ৯৪তম স্থানে চলে এসেছে বিআইডিএস। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে অবস্থান আরও ভালো হবে বলে আশা করি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি বললেন আগে জ্ঞানভিত্তিক ক্রিটিক্যাল আলোচনার সুযোগ ছিল অনেক বেশি। এখনকার কী অবস্থা। এখন গবেষকদের কথা নীতিনির্ধারকেরা কতটুকু শোনেন?

বিনায়ক সেন: আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন আর দশটা প্রতিষ্ঠান কথা বলে, একই বিষয়ে বিআইডিএস বললে নীতিনির্ধারকেরা অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তবে আমি মনে করি, বিআইডিএসসহ দেশের গবেষকেরা আরও কার্যকরী হতে পারতেন যদি সরকার উচ্চপর্যায়ে একটি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করত, যেটা বিভিন্ন দেশেই আছে। সেটা হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, যেমনটা ছিল শাহ এ এম এস কিবরিয়ার সময়। অথবা সেটা ভারতের মতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও গঠিত হতে পারে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এ রকম একটা উপদেষ্টা পরিষদ থাকাটা খুব জরুরি। নীতিনির্ধারণী বিষয় আলোচনার এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটা বর্তমানে অনুপস্থিত। বিচ্ছিন্নভাবে কাজভিত্তিক কিছু কমিটি হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করার জন্য টেকনিক্যাল জ্ঞানের যে তর্কবিতর্ক ও আলাপের দরকার হয়, সেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার অভাব আছে বাংলাদেশে। এটা আমাদের করতে হবে।

■ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে সরকারের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকা জরুরি। ■ নতুন বাজেট প্রবৃদ্ধিমুখী করার দরকার নেই। ■ আগামী ৩-৪ মাসে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। ■ বর্তমান সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতিই আপাতত বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কোভিড সংক্রমণের কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থনীতি একটি জটিল অবস্থায় আছে। এ সময়ে এ রকম এক কমিটি না হলে কবে আর হবে?

বিনায়ক সেন: এ সময় এ রকম একটি কমিটির খুবই দরকার ছিল। এই যেমন ধরেন, কোভিড থেকে উত্তরণে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কুটির, অতিক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্প খাতকে প্রণোদনা তহবিল থেকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনা কীভাবে কার্যকরভাবে বিতরণ ও ব্যবহার করা যায়, কমিটি থাকলে সেই আলোচনা করা যেত। আমাদের দেশে কিন্তু কুটিরশিল্পের কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। কুটিরশিল্পের ওপর একটা জরিপ হয়েছে সেই ২০১৫ সালের দিকে। সেই জরিপের তথ্য সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা তলিয়ে দেখার দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, দেশে শেষ অর্থনৈতিক জরিপ হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই তথ্য-উপাত্ত আরেকটু হালনাগাদ করে প্রণোদনা তহবিল কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ পত্রিকান্তরেই দেখতে পেয়েছি, বড়রা প্রণোদনা তহবিল যতটা পেয়েছে, তার চেয়ে কম পেয়েছে মাঝারি শিল্প এবং তার চেয়েও কম পেয়েছে ছোট উদ্যোক্তারা। কুটিরশিল্প পেয়েছে আরও কম। অথচ উচিত ছিল সবচেয়ে ছোট যারা, তাদের ক্ষেত্রেই তহবিলের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন। কারণ, তাদের প্রয়োজনটাই বেশি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব বিষয় ওপর থেকে কে মনিটর করছেন। কে বলবে যে এটা ঠিকমতো হচ্ছে না, ওটা এভাবে হওয়া উচিত। কে বলবে যে এখন এই জরিপ হালনাগাদ না করলে কোনো কিছু করতে পারা যাবে না। আসলে এ ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো সরকারের ভেতরে এমন কোনো কমিটিই নেই, যারা সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মাথা ঘামাবে। অথচ এ ধরনের কমিটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ অনেক দেশে আছে। আমার কথা হচ্ছে মধ্য আয়ের দেশ হলে নীতি নির্ধারণী বিশ্লেষণী প্রক্রিয়াও মধ্য আয়ের দেশের উপযোগী হতে হবে।

আসলে কোভিড-১৯ যে এতটা অনিশ্চিত হবে, অনুমান অগম্য হবে, এটা সামাল দিতে গিয়ে যে বিভিন্ন দেশ ও বিজ্ঞানীরা এত বেসামাল হবেন, এটা তখন বোঝা যায়নি। এর ফলে আমরা আর নিশ্চিত নই যে একই সঙ্গে জীবিকা ও জীবন—দুটোই চালানো যাবে কি না। তবে এখন একই সঙ্গে যদি জীবন ও জীবিকা চালানো না যায়, জীবনকে বাঁচাতে গিয়ে জীবিকাকে যদি ত্যাগ করতে হয়, সেটা কাজের কথা হবে না।
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অথচ মহামারির সময়ের অর্থনীতি নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরেই কথা হচ্ছে। জীবন-জীবিকা নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। এখন আপনার মূল্যায়ন কী?

বিনায়ক সেন: জীবন ও জীবিকার আলোচনাটি গত বছরে যতটা কার্যকর মনে হচ্ছিল, এবার আর তা মনে হচ্ছে না। এর একটা কারণ হচ্ছে আমরা ধরে নিয়েছিলাম, প্রথম ঢেউতেই করোনা মোটামুটি শেষ হয়ে যাবে। তখনকার বৈশিষ্ট্য দেখে মনে করেছিলাম স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া উচিত, আবার অর্থনীতির দিকেও নজর দিতে হবে। আমি নিজেই প্রথম আলোতে বলেছিলাম, অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে, স্বাস্থ্যের দিকে চোখ রাখতে হবে।

আসলে কোভিড-১৯ যে এতটা অনিশ্চিত হবে, অনুমান অগম্য হবে, এটা সামাল দিতে গিয়ে যে বিভিন্ন দেশ ও বিজ্ঞানীরা এত বেসামাল হবেন, এটা তখন বোঝা যায়নি। এর ফলে আমরা আর নিশ্চিত নই যে একই সঙ্গে জীবিকা ও জীবন—দুটোই চালানো যাবে কি না। তবে এখন একই সঙ্গে যদি জীবন ও জীবিকা চালানো না যায়, জীবনকে বাঁচাতে গিয়ে জীবিকাকে যদি ত্যাগ করতে হয়, সেটা কাজের কথা হবে না। এখন আগে জীবনকে বাঁচাতে হবে, তারপর অন্য কিছু।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তাহলে জীবিকার অবস্থাটা কী হবে?

বিনায়ক সেন: আমরা এখন বুঝতে পারছি আগামী তিন থেকে চার মাস যদি আমরা বড় বড় জেলা শহরে একটা কঠোর ও অব্যাহত লকডাউন বাস্তবায়ন না করতে পারি, তাহলে এই ভাইরাসকে আবার আমরা বোতলে ভরতে পারব না। তবে আমরা যদি তিন-চার মাসের লাগাতার লকডাউনে যাই, তাহলে শহর এলাকাগুলোতে যে জীবিকা নষ্ট হবে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করতে হবে। বেসরকারি খাত সংগঠিত খাতেই থাকুন বা অসংগঠিত খাতেই থাকুন, যাঁরা চাকরিচ্যুত হবেন, তাঁদের জন্য আমাদের সামাজিক কল্যাণের (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার) ব্যবস্থা করতে হবে। এটা প্রায় সব দেশই করেছে। ইংল্যান্ডের কথাই বলি, সেখানে যাঁরা চাকরিরত ছিলেন, কিন্তু লকডাউনের কারণে বসে থাকতে হয়েছে, বেতন পায়নি, তাদের জন্য সরকার আইন করে সহায়তা দিয়েছে। এতে ৩ শতাংশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সমান অর্থ তাদের ব্যয় হয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আমাদের দেশে কী করতে হবে?

বিনায়ক সেন: আমি ধরে নিচ্ছি ৩ শতাংশ জিডিপি আমাদের এখানেও যাবে। এর সঙ্গে আমাদের দেশে আগে থেকেই বেশ কিছু কর্মহীন মানুষ আছেন, সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে আছে এমন অনেকে আছেন, তাঁদের জন্য জিডিপির আরও ২ শতাংশ ব্যয় হবে। এ রকমভাবে জিডিপির ৫ শতাংশ আমাদের ব্যয় করতে হবে। এই অর্থ যদি আমরা আগামী চার থেকে পাঁচ মাস ব্যয় করতে পারি, তাহলে যাঁরা কর্মচ্যুত বা কর্মহীন হয়ে বসে থাকবেন, তাঁদের মৌলিক চাহিদা মোটামুটিভাবে পূরণ হবে। তবে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বাড়ালেই তো হবে না। নতুন দরিদ্র, পুরোনো দরিদ্র ও ক্ষণস্থায়ী দরিদ্রদের চিহ্নিত করে তাঁদের কাছে সামাজিক সুরক্ষার অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা এখনো আমরা কার্যকরভাবে করতে পারিনি, বিশেষত শহর এলাকায়। এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা ও নীতিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের দিকে যেতে হবে, সেটা রাশিয়া হোক, চীন হোক, বা যার সঙ্গেই হোক। এই টিকার চাহিদা শিগগিরই চলে যাচ্ছে না, আরও দুই-তিন বছর এটা থাকবে। সুতরাং প্রতিবছরই এই টিকার জন্য অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারব না। এ ক্ষেত্রে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের একটি বিষয় আছে। পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন সূত্র থেকে টিকা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে আমরা চটজলদি এই সংকটটা সামাল দিতে পারি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আর দুই সপ্তাহের পরেই তো বাজেট। আপনার বাজেট ভাবনা জানতে চাই।

বিনায়ক সেন: এটা স্পষ্ট যে আগামী অর্থবছরের বাজেটকে আমরা প্রবৃদ্ধিমুখী বাজেট করতে পারব না। ৮ শতাংশ তো দূরের কথা, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আছে, আমাদের এই লক্ষ্য অর্জন করার দরকারও নেই। বরং আমরা যদি ৫ বা এমনকি ৬ শতাংশেও থাকি, সেটাও আমাদের জন্য যথেষ্ট। বর্তমান এই সময়ে প্রবৃদ্ধি মোটেই বড় কোনো ইস্যু না, এমনকি প্রধান ইস্যুও না। এ জন্যই আমি প্রবৃদ্ধির কথা না বলে, কর্মসংস্থান সংরক্ষণের কথা বলতে চাই। আমরা জীবিকা রক্ষা করব, কিন্তু জিডিপি রক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই যে আমাদের ৮ শতাংশ হারেই প্রবৃদ্ধি আনতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তাহলে এবারের বাজেট ধরে আমাদের আলোচনাটা কী হওয়া উচিত?

বিনায়ক সেন: আগামী বাজেটে হওয়া উচিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বাজেট। আর এবার বরং আমরা জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে বেশি আলোচনা করি। সেখানে প্রবৃদ্ধি অবশ্যই হবে, সেটা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি, গ্রামীণ অকৃষি খাতে। আলোচনার দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য আমাদের রপ্তানি খাত। এই খাতকে আমাদের ফোকাসে রাখতে হবে। আর তৃতীয় ফোকাসের জায়গা হতে হবে অবশ্যই প্রবাসী আয়। এই তিনটি বিষয়ের বাইরে আমি মনে করি না আপাতত প্রবৃদ্ধির দিকে আমাদের যাওয়া উচিত। বরং যুদ্ধের সময়ের মতোই আগামী তিন-চার মাসে আমাদের জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো, জনস্বাস্থ্যের কর্মী, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সক্ষমতা—এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গত বাজেটের আগেও তো এ ধরনের কথা বলেছিলেন?

বিনায়ক সেন: গত বছরও এই কথা বলেছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি। বরং দেখছি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও এর এক-পঞ্চমাংশও ব্যবহার করতে পারিনি। খুবই দুঃখের কথা যে কোভিডের সময়ও আমরা স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারলাম না। এমনকি গবেষণার এক টাকাও ব্যবহার করতে পারলাম না।

অথচ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ই তো বলা আছে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। আর এখন আমরা দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করি। যে সংকট, তাকে সামনে রেখে আমাদের জোর দেওয়া উচিত জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সামাজিক সুরক্ষাকেও পুনরুজ্জীবিত করে মৌলিক আয়ের একটি সর্বজনীন বৈশ্বিক মডেলে (ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম) নিয়ে যাওয়া, যার কথা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রণব বর্ধনসহ বিশ্বের সব অর্থনীতিবিদ, এমনকি থমাস পিকেটিও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে অবশ্যই আমাদের বর্তমান সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতিতেই থাকতে হবে। এই নীতি থেকে আপাতত সরে আসার সুযোগ নেই।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

বিনায়ক সেন: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।