আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমলেও দেশে বাড়ল

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমলেও দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ৫১৬ টাকা বাড়িয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির নেতারা। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকায়। সোনার এই নতুন দর আজ রোববার সকাল থেকে সারা দেশে কার্যকর করেছে জুয়েলার্স সমিতি।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায়। সেখানে দাম বাড়ানোর পক্ষে সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা যুক্তি দিয়েছেন, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট ও নানা জটিল সমীকরণের কারণে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ থাকার পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে শুল্ক জটিলতা ও নানা ধরনের দাপ্তরিক জটিলতায় ডিলার লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সোনার বার আমদানি করতে পারছে না। তা ছাড়া চাহিদার বিপরীতে জোগান কম থাকায় দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটে সোনার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

জুয়েলার্স সমিতি সোনার দাম বাড়ানোর বিষয়ে নানা যুক্তি দেখালেও আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই মাসে কিছুটা উত্থান–পতন থাকলেও শেষ পর্যন্ত দর মোটামুটি স্থিতিশীল। সর্বশেষ গত ২০ জুন সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫১৬ টাকা হ্রাস করেছিল জুয়েলার্স সমিতি। ওই দিন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৭৮৩ মার্কিন ডলার। গত বৃহস্পতিবার সেই দাম কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮১ ডলার। তার মানে প্রতি আউন্সের দাম দুই ডলার কমেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমলেও দেশে কেন বাড়ল, সে বিষয়ে জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বুলিয়ন বাজারে খাঁটি সোনার দাম বেড়ে গেছে। গতকাল ৬৪ হাজার ২০০ টাকা ভরিতে খাঁটি সোনা বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের ভরিতে ২ হাজার ৫৩৩ টাকা বাড়ানোর দরকার ছিল। তবে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে একেবারে এত দাম বাড়ানো হয়নি।’

করোনার কারণে দেড় বছর ধরে দেশ–বিদেশের সোনার বাজারে অস্থিরতা চলছে। গত বছর ৬ আগস্ট দেশে সোনার দাম ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা ভরি হয়েছিল। সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। ওই সময় সোনার অলংকার বিক্রির প্রবণতাও বেড়েছিল।

কয়েকজন জুয়েলার্স ব্যবসায়ী বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা ১৯ দিন বিধিনিষেধ ছিল। আকাশপথে যাত্রী পরিবহন সীমিত ছিল। দোকানপাটও বন্ধ ছিল। ফলে বিদেশ থেকে ব্যাগজ রুলসের আওতায় সোনার বার আমদানি কিংবা পুরোনো অলংকার বিক্রি দুটিই কমে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে এখনই সোনার দাম না বাড়িয়ে কয়েক দিন বাজার পর্যবেক্ষণ করা যেত। অবশ্য দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারাও পুরোনো অলংকার বিক্রিতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

আজ থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ায় ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগবে ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট ৭০ হাজার ৩৩৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬১ হাজার ৫৮৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকারের ভরি বিক্রি হবে ৫১ হাজার ২৬৩ টাকায়।

গতকাল পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনা ৭১ হাজার ৯৬৭ টাকা, ২১ ক্যারেট ৬৮ হাজার ৮১৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬০ হাজার ৭০ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকার বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার ৭৪৭ টাকায়। আজ থেকে ২২, ২১, ১৮ ক্যারেট ও সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরিতে ১ হাজার ৫১৬ টাকা বেড়েছে।