আমরা প্রবৃদ্ধি–আসক্তিতে ভুগছি: সিপিডির সংলাপে অভিমত

ভার্চুয়াল সংলাপে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
বিজ্ঞপ্তি

কোভিডে ৬২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কাজ হারিয়েছেন। পরে কেউ কেউ কাজ খুঁজে পেলেও বড় অংশই কাজ ফিরে পাননি। বেশি কাজ হারিয়েছেন সেবা খাতের মানুষেরা। জীবিকার প্রয়োজনে তাঁরা পেশা পাল্টে সেবা থেকে কৃষি খাতের কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। যদিও তাঁদের অন্তত ৯০ শতাংশই আত্মনিয়োজিত, পরিবারকে সাহায্য এবং দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজে যুক্ত হয়েছেন।

‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শীর্ষক খানা জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ তথ্য উঠে আসে। ২ হাজার ৬০০ খানার ওপর গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জরিপটি করা হয়। সংগত কারণেই কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কার কোনো চিত্র উঠে আসেনি এতে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপটি করেছে। আর্থিক সহায়তায় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জরিপের ফলাফলের ওপর আজ বুধবার অনলাইনে সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

জরিপে জানা গেছে, কোভিডে কারণে ৭৮ শতাংশ মানুষই কম খরচ করেছেন। অন্তত ৫ শতাংশকে সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে।

জরিপের ফলাফলের তথ্য উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, কোভিডের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ৭৮ শতাংশই মানুষ কম খরচ করেছেন। অন্তত ৫ শতাংশকে সম্পদ বেচে চলতে হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রবন্ধে। বলা হয়, সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কাজ পান। আবার এমন প্রণোদনা প্যাকেজ রাখতে হবে, যাতে রেয়াতি সুদে ঋণ নিতে পারেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি এ ধরনের জরিপের ফলাফল শুনছে? নাকি নিজেদের মতো করেই বা নিজেরা যা ভাবছে, সেভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে?

সিপিডির আরেক বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোভিডের কারণে মানুষ খাওয়া কমিয়েছে। নব্য গরিব হয়েছেন অনেকে। বৈষম্য বাড়ছে। কোভিডের অভিঘাত সবচেয়ে বেশি পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। অথচ আমরা প্রবৃদ্ধি-আসক্তিতে ভুগছি। তথ্য-উপাত্তই যেখানে নেই, সেখানে প্রবৃদ্ধি খুঁজতে যাওয়া মানে অন্ধকারে কালো বিড়াল খোঁজা।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম খাতবিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অতিমাত্রায় প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছি কি না। অথচ প্রবৃদ্ধির ফল মুষ্টিমেয় লোক ভোগ করছে।’

রিজওয়ানুল ইসলামের প্রশ্ন, ‘প্রবৃদ্ধি অবশ্যই চাই। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি কি অন্তর্ভুক্তিমূলক? এ দিয়ে বেকারত্বের হার কতটা কমাতে পেরেছি? দারিদ্র্যের হার কতটা নামিয়ে আনতে পেরেছি? বৈষম্য কমাতে কী করেছি?’