আমানতের টাকা ফেরত পেতে ২৬ বার তাগাদা

পদ্মা ব্যাংকে আমানত রেখে আগে ঘুরেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি। এখন ঘুরছে জীবন বীমা করপোরেশন।

  • সাতটি মেয়াদি আমানতের বিপরীতে জীবন বীমা করপোরেশনের পাওনা ১২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা

  • মিরপুর শাখায় ভিন্ন দুটি হিসাবে আমানত রাখা হয় ৩৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

  • মতিঝিল শাখায় ভিন্ন তিনটি হিসাবে আমানত রাখা আছে ৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) জমা রাখা সাতটি মেয়াদি আমানতের ১২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিচ্ছে না বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স)। এর মধ্যে ১০৯ কোটি হচ্ছে আসল, আর বাকি ১৩ কোটি ৫০ লাখ সুদ।

আগে একই ঘটনা ঘটেছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিল এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসির) তহবিলের ক্ষেত্রেও। এ নিয়ে তিন বছর আগে জাতীয় সংসদেও কথা উঠেছিল।

জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জহুরুল হক গত ৩১ মার্চ সব টাকা ফেরত চেয়ে পদ্মা ব্যাংককে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৬টি তাগাদাপত্র ও ৫টি আধা-সরকারি পত্র দেওয়া হলেও টাকা ফেরতের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একই বিষয়ে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছে জেবিসি।

চিঠিতে বলা হয়, পদ্মা ব্যাংকের মিরপুর শাখায় দুই ভিন্ন হিসাবে আমানত রাখা হয় ৩৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ হিসাব দুটি নবায়ন হয়, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ জমেছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আসল ও সুদ মিলিয়ে পাওনা হয়েছে ৪০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। মতিঝিল শাখায় তিনটি ভিন্ন হিসাবে আমানত রাখা আছে ৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

২০১৭ সালের আগস্টে হিসাবগুলো সর্বশেষ নবায়ন হয়, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয় পরের বছরের আগস্টে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ জমা হয়েছে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সুদ ও আসল মিলিয়ে এ শাখায় জেবিসির পাওনা ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর গুলশান শাখায় দুটি মেয়াদি হিসাবে আসল টাকা ৩১ কোটি ৯০ লাখ।

২০১৭ সালের আগস্টে হিসাবগুলো সর্বশেষ নবায়ন হয়, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয় পরের বছরের আগস্টে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ জমা হয়েছে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সুদ ও আসল মিলিয়ে এ শাখায় জেবিসির পাওনা ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর গুলশান শাখায় দুটি মেয়াদি হিসাবে আসল টাকা ৩১ কোটি ৯০ লাখ। সর্বশেষ নবায়ন হয়েছে ২০১৭ সালের আগস্টে। ২০১৮ সালের আগস্টে মেয়াদ শেষ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সুদ ও আসল মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।

জানা গেছে, জেবিসির এমডি জহুরুল হকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের এমডি এহসান খসরুর গত ১ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, জেবিসির মেয়াদি আমানতের অর্থ ফেরত দিতে একটি পরিশোধ পরিকল্পনা তৈরি করে শিগগিরই চিঠি দেবেন এহসান খসরু। এ ছাড়া আমানতের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করে শিগগিরই জেবিসির হালনাগাদ সব সুদ পরিশোধ করবে পদ্মা ব্যাংক।

এ সম্পর্কে জেবিসির এমডি চিঠিতে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি এবং পদ্মা ব্যাংক জেবিসির টাকা নগদায়নও করেনি।’
জানা গেছে, স্থায়ী আমানতগুলোর শুরুর দিকে (২০১৪-১৫) সুদ ছিল ১১ শতাংশ। শেষের দিকে (২০১৬-১৭) সুদহার করা হয় ৯ থেকে ৯.২৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে জেবিসির এমডি মো. জহুরুল হক বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংক একটি পরিশোধ পরিকল্পনা পাঠাবে বলেও পাঠায়নি। শুনেছি সুদের হার কমিয়ে নিজেদের মতো হিসাব করছে তারা। তবে আমরা আইনের বাইরে যেতে পারব না।’

সূত্রগুলো জানায়, কোন সংস্থা কোথায় টাকা রাখবে, সে ব্যাপারে পর্ষদই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পর্ষদে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিও থাকেন। পদ্মা ব্যাংকে টাকা রাখার সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শুরুতে এম আসলাম আলম এবং পরে মো. ইউনুসুর রহমান।

ইউনুসুর রহমান এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান। মোবাইল ফোনে তিনি প্রথম আলোকে জানান, পদ্মা ব্যাংকে জেবিসির টাকা রাখার বিষয়ে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তার করেননি।

জেবিসি হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন সংস্থা। তাই সচিব হিসেবে মো. আসাদুল ইসলাম সংস্থাটির আমানত উদ্ধারে কী ভূমিকা পালন করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে গত রোববার তিনি বলেন, ‘আমানত যারা রেখেছে, উদ্ধারের দায়িত্ব তাদেরই। তবে পদ্মা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক, আমরা তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বলেছি।’

এদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিলের ৫০৮ কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংক ফেরত দেয়নি বলে ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তথ্য দিয়েছিলেন তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংকে ৩৮ কোটি টাকা আমানত রেখে সময়মতো ফেরত পায়নি বিটিআরসি।

পদ্মা ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু গত রোববার মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জলবায়ু তহবিল ও বিটিআরসির অনেক টাকাই দেওয়া হয়েছে। সুদ কমানোর কথা বললেও জেবিসি তা মানতে চায় না। জেবিসিকে সুদ দিয়ে আসছি, আরও দেব। জুলাইয়ের পর পুরো বিষয়টির একটা সুরাহা বের করব।’