ই–কমার্স খাতে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ‘প্ল্যাটফর্ম’ গঠনের উদ্যোগ

ক্রেতাদের ভোগান্তি ও অভিযোগ কমিয়ে অনলাইনভিত্তিক পণ্য ব্যবসাকে জনপ্রিয় করতে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব)। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প অনলাইন মার্কেটপ্লেস একশপের কারিগরি সহযোগিতায় ইতিমধ্যে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।

প্ল্যাটফর্মটি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান ও প্ল্যাটফর্ম কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে, তা নির্ধারিত হলে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকেই এটি কাজ শুরু করতে পারবে বলে ধারণা করছে এটুআই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

আশা করা হচ্ছে, অভিযোগ নিষ্পত্তির কেন্দ্রীয় এই প্ল্যাটফর্ম চালু হলে অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যকার বিরোধের সব ধরনের তথ্য কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকবে। এর ফলে সমস্যা অভিযোগের হার অনেকটাই কমবে।
গত বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এটুআই-একশপের কার্যালয়ে প্রথম আলোকে প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম প্রদর্শন করেন একশপের দলনেতা রেজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মটি চালু হলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কাজ অনেক সহজ হবে। এর ফলে অভিযোগ নিষ্পত্তির গতি ৬০-৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

গত ৪ জুলাই জারি হওয়া ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম চালু হলে অনলাইন ব্যবসার ওপর আমাদের নজরদারি করা সহজ হবে। অনেক ক্রেতাই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর পর্যন্ত যেতে পারেন না। কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম থাকলে অভিযোগ ভোক্তা অধিকার পর্যন্ত না পৌঁছালেও আমরা জানতে পারব কোন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে।’

একশপের তৈরি করা প্ল্যাটফর্মটির নকশা অনুযায়ী প্রতিটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অভিযোগ প্ল্যাটফর্মটির হাইপার লিংক থাকবে, যেখানে ক্লিক করলে সরাসরি কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্ল্যাটফর্মে ঢোকা যাবে। ক্রেতা তাঁর পরিচয় এবং পণ্যের চালান নম্বর উল্লেখ করে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের সঙ্গে পণ্যের ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ যুক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

একশপের দলনেতা রেজওয়ানুল হক বলেন, নকশাটা এমনভাবে করা হয়েছে যেন ‘ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সমস্যা নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আলোচনার প্রমাণ থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি নিষ্পত্তি না হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে এবং তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

প্ল্যাটফর্মটির নকশায় কর্তৃপক্ষের কথা উল্লেখ করা হলেও এই কর্তৃপক্ষ কে হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ডব্লিউটিও সেলের ডিজি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার জন্য আমরা ইক্যাবকে বিবেচনা করছি। তারাই যেন প্রাথমিকভাবে নিজেদের সদস্যদের মধ্যকার সমস্যার সমাধান করে। তবে সর্বোচ্চ নিষ্পত্তি কর্তৃপক্ষ হিসেবে অবশ্যই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থাকবে কি না, সেই বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এদিকে ইক্যাবই প্রথম অনলাইন ব্যবসায় সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ নিলেও এটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আবদুল ওয়াহেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তত এক লাখ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ফেসবুক পেজ রয়েছে, সেখানে ইক্যাবের সদস্য মাত্র ১ হাজার ৬০০টি প্রতিষ্ঠান। আমরা প্ল্যাটফর্মের সার্বিক সহযোগিতায় থাকতে পারি, তবে এর দায়িত্ব নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন।’

কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম শুরু করতে আর্থিক জটিলতাও রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্ল্যাটফর্ম কার্যকর রাখতে কিছু কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণেও কিছু খরচ হবে। ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটুআই-একশপ আমাদের জানিয়েছে, তাদের অন্তত ১০ জন কর্মী ও ৩০ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি।’

আর্থিক নিশ্চয়তা ও নীতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দ্রুততম সময়ে কেন্দ্রীয় ই–কমার্স নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্মের বাস্তবায়ন চায় ইক্যাব। সংগঠনটির মহাসচিব আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি না করতে পারায় ই–কমার্স ব্যবসা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে এ রকম একটি প্ল্যাটফর্ম লাগবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৯ হাজার ৩০৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সম্পর্কে ইক্যাবের মহাসচিব বলেন, যে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি হয়নি, সেগুলোর সঙ্গে জড়িত টাকার পরিমাণ খুব কম নয়।