ইভ্যালি কেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ঈদের আগে এক নোটিশ দিয়ে জানতে চেয়েছিল গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ কেন? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে থাকলে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, আর না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।

ইভ্যালি এ প্রশ্নের জবাব দেয়নি। কোম্পানিটি বরং গতকাল রোববার এক আবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাব দেওয়ার জন্য বাড়তি সময় চেয়েছে। ইভ্যালি বলেছে, আগে তৃতীয় একটি নিরপেক্ষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইভ্যালির সম্পূর্ণ আর্থিক হিসাব বিবরণী ও কোম্পানির মূল্যায়ন করতে হবে। এ জন্য ছয় মাস সময় লাগবে এবং এরপরই তারা সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে। আর্থিক হিসাব বিবরণীতেই উঠে আসবে কোম্পানির মোট সম্পদ, গ্রাহকদের কাছে দেনা ও মার্চেন্টদের কাছে দেনার পরিমাণ।

আরও পড়ুন

তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষকের মাধ্যমে নিরীক্ষা করার যুক্তি হিসেবে ইভ্যালি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল বিভিন্ন হিসাব ইভ্যালির কাছে চেয়েছিল, যা সময়স্বল্পতা ও তাদের ফরম্যাট অনুযায়ী সম্পূর্ণরূপে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রতিবেদনে যে ঘাটতিগুলো উঠে এসেছে, তা প্রকৃত চিত্র সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জবাব দিতে ইভ্যালিকে ছয় মাস সময় দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটা বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

গত ১৯ জুলাই ইভ্যালিকে দেওয়া নোটিশের জবাব দেওয়ার শেষ সময় ছিল গতকাল রোববার। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল নোটিশে। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ না করার পাশাপাশি ইভ্যালি মার্চেন্টদের কাছ থেকে পণ্য নিয়েও অর্থ পরিশোধ করছে না বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নোটিশে উল্লেখ করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু প্রশ্নের জবাব চাইলেও ইভ্যালি তা দিতে সময় চেয়েছে ছয় মাস। ইভ্যালি আগে তাদের একটি নিরপেক্ষ নিরীক্ষা চায়, এরপর সব প্রশ্নের জবাব দিতে চায় বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

সময় বৃদ্ধির দেড় পৃষ্ঠার আবেদনপত্রেই ইভ্যালি অবশ্য চারটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জবাবগুলো ভাসা ভাসা। অর্থাৎ জানতে চাওয়া হয়েছে এক বিষয়, তারা জবাব দিয়েছে আরেক বিষয়ের। কোনো কোনো প্রশ্নের জবাবে অসংগতিপূর্ণ তথ্যও দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন ও ইভ্যালির জবাব মিলিয়ে দেখা যেতে পারে।

১. নোটিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছিল মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ কত, তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? জবাবে ইভ্যালি বলেছে, ‘প্রত্যেক মার্চেন্টের অর্ডারের বিপরীতে সরবরাহের বর্তমান অবস্থা যাচাই, সরবরাহকৃত পণ্য গ্রাহক যথাযথভাবে পাওয়ার নিশ্চয়তার প্রমাণ, ত্রুটিপূর্ণ পণ্যের অভিযোগ, আগের বিলের সমন্বয় সাধনসহ নানাবিধ বিষয় জড়িত থাকে। ৫ হাজারের বেশি মার্চেন্টের এ হিসাব সম্পন্ন করাটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

২. ব্যবসা শুরুর পর থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কত টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত টাকা পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কত টাকা ব্যয় করেছে—এ প্রশ্নের জবাবে ইভ্যালি বলেছে, ‘নিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এর জবাব দেওয়া সম্ভব হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ইভ্যালি আগের প্রতিশ্রুত পণ্যের সরবরাহ ক্রমান্বয়ে সমাপ্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং প্রতি ১৫ দিন পর সরবরাহের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে জানাবে।’

৩. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা কী—এটা ছিল মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রশ্ন। জবাবে ইভ্যালি বলেছে, ‘বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ৩১ মে থেকে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য সরবরাহে ‘‘প্রায়োরিটি ক্যাম্পেইন’’ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ জুলাই থেকে “টি-১০ ক্যাম্পেইন” শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি মার্চেন্টদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ব্যবসা বৃদ্ধি ও আগে প্রতিশ্রুত পণ্য গ্রাহকদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।’

আরও পড়ুন

৪. ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা ইভ্যালি করছে কি না, এটা ছিল ইভ্যালির কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শেষ প্রশ্ন। এর জবাবে ইভ্যালি বলেছে, ‘নীতিমালা ও নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইভ্যালি।’

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে আজ সোমবার মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক তথ্য-উপাত্ত গোছাতে হবে। তাই মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা ছয় মাস সময় চেয়েছি। কিছু প্রশ্নের জবাবও দিয়েছি।’ নোটিশ পাওয়ার দিন গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সব প্রশ্নেরই সন্তোষজনক জবাব আমাদের রয়েছে। কারণ, সব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতায় হয়েছে।’

সময় বৃদ্ধির আবেদনে ইভ্যালি এ-ও বলেছে, এক হাজার কোটি টাকার একটি বিনিয়োগ চুক্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা এবং পর্যায়ক্রমে বাকি টাকা বিনিয়োগ হবে ইভ্যালিতে। এ টাকা বর্তমান আলোচ্য ঘাটতি পুরোপুরি নিরসনে সহায়ক হবে।