ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিক্রি নিয়ে ই–ভ্যালিকে আইনি নোটিশ

অনলাইনে পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালিকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশে জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের পরিবেশক এসিআই মোটরস। তারা বলছে, ই-ভ্যালিতে ইয়ামাহার নাম দিয়ে যেসব মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে, তা আসল নয়। এতে ইয়ামাহার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

এসিআই মোটরস বাংলাদেশে ইয়ামাহার একমাত্র পরিবেশক। তারা ১ এপ্রিল আইনি নোটিশটি দেয়। এতে সাত দিনের মধ্যে ই-ভ্যালিতে ইয়ামাহার ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধের জন্য বলা হয়। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

অবশ্য আজ সোমবারও ই-ভ্যালির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিক্রি করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ই-ভ্যালির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের বক্তব্যে বলা হয়, ‘লকডাউনের’ কারণে খুবই সীমিত পরিসরে তাঁদের দাপ্তরিক কাজ চলছে। সেখানে শুধু জরুরি সেবাবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই এমন কোনো নোটিশ তারা পেয়েছেন কি না, নিশ্চিতভাবে জানাতে পারছেন না।

এসিআই মোটরস দাবি করেছে, ই-ভ্যালিতে ইয়ামাহার নাম দিয়ে যেসব মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে, তা আসল নয়। এতে ইয়ামাহার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

মোহাম্মদ রাসেল আরও বলেন, তাঁরা ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকেই মোটরসাইকেল নিচ্ছেন। তাহলে মোটরসাইকেল নকল হলো কীভাবে? এসিআই মোটরস তাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত হতে চায় না বলেই পরিবেশকদের মাধ্যমে মোটরসাইকেল নিতে হয়।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ইয়ামাহার পরিবেশক হয় এসিআই মোটরস। তারা গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কারখানাও করেছে যেখানে ইয়ামাহার মোটরসাইকেল সংযোজন ও উৎপাদন হয়। এই কারখানায় কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইয়ামাহা। ১৯৫৫ সালে জাপানে প্রতিষ্ঠিত ইয়ামাহা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি।

বাংলাদেশে বছরে ইয়ামাহার ২০ হাজারের মতো মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এই বিক্রি প্রতিবছরই বাড়ছে। উকিল নোটিশে এসিআই মোটরস বলেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন থেকে এসিআই মোটরস ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক। সেই থেকে একমাত্র এসিআই মোটরস ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আমদানি, সংযোজন, উৎপাদন, বিপণন, মজুতকরণ এবং বিক্রয়-পরবর্তী সেবা ও ওয়ারেন্টি সার্ভিস দিচ্ছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে এসিআই মোটরসের সঙ্গে ইয়ামাহার কারিগরি সহায়তা চুক্তিও রয়েছে।

আরও পড়ুন

নোটিশে আরও বলা হয়, ইয়ামাহার দেওয়া চিঠি অনুযায়ী এসিআইয়ের বাইরে বাংলাদেশে আর কেউ ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারবে না। ই-ভ্যালির সঙ্গে এসিআই মোটরসের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। তাই ই-ভ্যালি ইয়ামাহা ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের অননুমোদিত সরবরাহকারী।

ই-ভ্যালি নকল ও নিম্নমানের ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি করছে বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে। বলা হয়, ই-ভ্যালি ইয়ামাহা ট্রেডমার্ক ব্যবহার করেই যাচ্ছে। এটা ইয়ামাহার ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে লাভের উদ্দেশ্যে ক্রেতাদের প্রতারিত করার শামিল। ই-ভ্যালি নিজেদের লাভের জন্য ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের সুনামকে ব্যবহার করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করেছে এসিআই মোটরস। ক্রেতাদের কাছে এটা এসিআই মোটরসের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।

নোটিশে পুরো প্রক্রিয়াটি ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক অ্যাক্টের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে বলা হয়, সাত দিনের মধ্যে ই-ভ্যালি ইয়ামাহা ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধ না করলে তারা দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ই-ভ্যালি আগে এসিআই মোটরসের পরিবেশকদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিত। ছয় থেকে সাত মাস আগে সেটা বন্ধ করা হয়েছে। তাই এখন ই-ভ্যালি যেসব ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি করছে তা অনুমোদিত নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ই-ভ্যালিকে আমরা আইনি নোটিশ দিয়েছি। এখন পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।’