ঈদের আগে বিকাশ–রকেট–নগদে লেনদেন চাঙা

বর্তমানে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।

মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) এখন শুধু টাকা পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটা, টিকিট, বিল পরিশোধসহ আরও নানা সেবা এতে যুক্ত হয়েছে। ফলে গ্রাহকেরা এখন উঠতে–বসতে বিকাশ, রকেট ও নগদের সেবা ব্যবহার করছেন। এবার ঈদের আগে এই সেবা ব্যবহারে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে। এখন এসব সেবায় দৈনিক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এক–দুই মাস আগেও দৈনিক সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। ঈদের কারণে একলাফে এমএফএসের দৈনিক লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে।

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ঈদের আগে বেতন-বোনাস দেওয়া হচ্ছে। আবার সরকারি বিভিন্ন অনুদান এসব সেবার মাধ্যমে যাচ্ছে। পাশাপাশি শহর থেকে গ্রামে জাকাত ও সাহায্য-সহযোগিতার টাকা যাচ্ছে। ঈদের আগে প্রবাসী আয় বিতরণও বেড়েছে। এর ফলে এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে।

বর্তমানে এমএফএস সেবা ব্যবহার করে দিনে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যাচ্ছে। দেশে এ ধরনের আর্থিক সেবা দিচ্ছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিকাশের নিয়ন্ত্রণে ৭০ শতাংশ বাজার। বাকি গ্রাহক ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের রকেট, ডাক বিভাগের নগদ ও অন্য সেবাদাতাদের।

জানা গেছে, এখন বিকাশের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় এক কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আগে দৈনিক ৭০-৮০ লাখ বার লেনদেন হতো। বিকাশে এখন গড়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আগে প্রতিদিন লেনদেন হতো ১ হাজার ৬০০ কোটি থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ফলে শুধু বিকাশের মাধ্যমেই লেনদেন বেড়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। এখন ২৮টি ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা আনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আর্থিক সেবা ছড়িয়ে দিতে অবকাঠামোগত বড় উন্নয়ন করেছে বিকাশ।

জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে সেবা ছড়িয়ে দিতে আমরা অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করেছি, তার ফলে এমনিতে লেনদেন বাড়ছিল। এখন ঈদের কারণে তা আরও বেড়ে গেছে।’

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এমএফএস প্রতিষ্ঠান রকেটে এখন দৈনিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। আগে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪১৫ থেকে ৪২০ কোটি টাকা।

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ঈদের আগে বেতন-বোনাস ও সরকারি ভাতা প্রদানের কারণে লেনদেন অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া অনেকেই গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।

ডাক বিভাগের এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে এখন গড়ে ৫৩৩ কোটি টাকা করে লেনদেন হচ্ছে। আগে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৯৫ কোটি টাকা।

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, নগদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার কৃষক,শ্রমিক ও জেলেদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আবার সাধারণ মানুষও ঈদের আগে টাকা পাঠানো বাড়িয়েছেন। এ কারণে ঈদের আগে লেনদেনে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিবন্ধিত ১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান নগদও এ সেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত ১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ১০ কোটি ২৩ লাখ। এর বাইরে নগদের গ্রাহক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। সব মিলিয়ে দেশে এমএফএসের গ্রাহক প্রায় ১৫ কোটি। যদিও একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস ব্যবহার করেন।