এ বছর ৩.৬% প্রবৃদ্ধি হতে পারে: বিশ্বব্যাংক

চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। তবে এখনো অর্থনীতিতে ব্যাপক অনিশ্চয়তা আছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। করোনা মহামারি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা যেমন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, আবার পরিবর্তিত করোনা পরিস্থিতিতে সরকারকে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করতে হয়, তাও আরেক ধরনের অনিশ্চয়তা। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার কারণে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদান করতে হলে ৪৪ থেকে ১৮৮ কোটি ডলার লাগবে। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়ে আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

আজ বুধবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস স্প্রিং ২০২১: সাউথ এশিয়া ভ্যাকসিনেটস’ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। করোনাকালের এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে বর্তমান করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির গতি–প্রকৃতি, চলাচলে নতুন নিষেধাজ্ঞা, কত দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হয়, তার ওপর। পুনরুদ্ধার পর্যায়ে রপ্তানি ও স্থানীয় ভোগ অব্যাহত থাকলে মধ্য মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৭ শতাংশ হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুরু হয়ে গেছে। নিরাপদ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ হলো টিকা প্রদান। ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে করোনাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ উঠিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটতে শুরু করে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন কার্যালয় থেকে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেন, করোনার কারণে বহু লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। এমন অবস্থায় নিরাপদ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ হলো টিকা প্রদান। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে টিকা কেনার অর্থ দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার সব মানুষের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে চায়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদান করতে হলে ৪৪ থেকে ১৮৮ কোটি ডলার লাগবে।

সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়ে আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। পরের বছর তা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। চলতি অর্থবছর শেষে অতি দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে। করোনার কারণে এ হার ১১ শতাংশ ছিল।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গতি–প্রকৃতি বিবেচনা করে তিন মাসে পরেই এ পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ করল বিশ্বব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টিমার বলেন, বাংলাদেশের বিপদ এখনো কাটেনি। এখনো অনেক অনিশ্চয়তা আছে। গত দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নানা ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সমস্যা অতিক্রম হয়েছে। কেননা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় কত লোক কোভিড-১৯–এ সংক্রমিত হচ্ছেন, তা নির্ধারণ করা কঠিন। সরকারি তথ্য–উপাত্তে যে সংখ্যা দেখানো হয়, তা সংক্রমিত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা নয়।

ভারতের ১০% প্রবৃদ্ধি হতে পারে

চলতি অর্থবছরে একমাত্র ভুটান ছাড়া বাকি সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ভারতে ১০ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আগের বছরে ভারতের জিডিপি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। এ দিকে চলতি অর্থবছরে মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য গতবার মালদ্বীপের জিডিপি কমেছিল ৩৮ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া পাকিস্তান ১ দশমিক ৩ শতাংশ, নেপাল ২ দশমিক ৭ শতাংশ, আফগানিস্তান ১ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। আর ভুটানের জিডিপি ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। সার্বিকভাবে ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।