একটির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, অন্যটি চায় আরও সুবিধা

এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব বলছে। পাশাপাশি বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে উভয় সংগঠন।

মো. জসিম উদ্দিন ও ফারুক হাসান

প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বলে উল্লেখ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। তবে তাদের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়করসংক্রান্ত তাদের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হলে খাতওয়ারি অসংগতি থেকে যাবে মনে করে সংগঠনটি।

ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন বলেছে, চলমান মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুল্ক ও করকাঠামো সংস্কার করে জনবান্ধব, বিনিয়োগবান্ধব ও উৎপাদনশীল রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি ও বাজেট বাস্তবায়ন বিভাগকে পৃথক করার পাশাপাশি ভ্যাট আইন সহজীকরণ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানায় তারা।

রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকন ভবনে গতকাল শনিবার বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সংগঠনটির নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি নিহাদ কবির, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

এফবিসিসিআই আরও বলছে, এসএমই খাতে দেওয়া প্রণোদনার ৩০ শতাংশ এখনো বিতরণ হয়নি। ব্যাংকে হিসাব না থাকায় প্রণোদনা পাননি ছোট ব্যবসায়ীরা। বাজেট পাসের আগে নতুন করে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন।

রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। রাজস্ব বাড়াতে সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর ও ভ্যাট অফিস স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাট আদায়ে অল্প কিছু ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) কিংবা ভ্যাটের মেশিন দিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই সবাইকে মেশিনটি দিলে ভ্যাট আদায় বাড়বে। এতে সরকার এক টাকা বিনিয়োগ করলে ১০০ টাকা পাবে। তা ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়াতে করের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি কাজে টিআইএন নম্বরের পাশাপাশি কর পরিশোধের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা দরকার।

বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেটের আকার বাড়ছে। এই বাজেট বাস্তবায়নের চিরায়ত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ তদারকি, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়। এ জন্য প্রশাসনিক ও নির্বাহী দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও তদারকি বাড়াতে হবে।

সব ধরনের উৎসে কর ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এ ধরনের কর ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দেয়, তাই আমরা ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের কথা বলেছিলাম। কারণ, আমরা নিশ্চিত নই, বছর শেষে ব্যবসা থেকে লাভ নাকি লোকসান হবে। অথচ বাজেটে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া ভ্যাটের আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাজেটে ভ্যাটের আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আগাম করের কারণে খরচ বৃদ্ধি পায় বলে আমরা সেটিও সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছিলাম।’

বিজিএমইএ আরও সুযোগ-সুবিধা চায়

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা বাজেটে নতুন করে কিছু পাননি। তবে দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাও বাতিল হয়নি। তারপরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া জানিয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি এস এম মান্নান, শহিদউল্লাহ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনার কারণে নতুন বাজারগুলো অর্থনৈতিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে রপ্তানি কমে গেছে। তাই নতুন বাজারে রপ্তানি ধরে রাখতে প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার আবেদন করছি।’ এ ছাড়া নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন তিনি।

কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান মেইড ফাইবারের পোশাক রপ্তানিতে ১০ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনার দাবি করে ফারুক হাসান বলেন, ‘ম্যান মেইড ফাইবারে বেশ কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকতে পারছি না আমরা। প্রণোদনা দিলে টিকে থাকার সুযোগ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’