এমএফএসে বাড়তি করে কমতে পারে বিনিয়োগ

দেশে কার্যরত মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত লেনদেন মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমানত নিতে পারছে না, তবে গ্রাহকদের টাকার একটি অংশ তাদের কাছে জমা থাকে। ব্যাংকের মতো ঋণ কার্যক্রম বা অন্য কোনো সেবাও নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। এরপরও বিকাশ-নগদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ব্যাংকের সমান করপোরেট কর আদায়ের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত ২০২১–২২ অর্থবছরের বাজেটে এমএফএসের করপোরেট কর সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাজেটের নতুন এ প্রস্তাবের ফলে মুনাফা করলেই এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের চেয়ে বেশি করপোরেট কর দিতে হবে। তবে এই খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো মুনাফায় না থাকায় করপোরেট কর বাড়ানোর প্রভাব আপাতত তাদের ওপর পড়বে না। করপোরেট কর দিতে না হলেও লোকসানি এসব প্রতিষ্ঠানকে বর্তমানে লেনদেনের ওপর দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এবারের বাজেটে তা কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে সরকার। ফলে আপাতত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ তৈরি হবে না বলে মনে করছেন কর কর্মকর্তারা। তবে দীর্ঘ মেয়াদে চাপে পড়বে পুরো খাত। ফলে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ বিনিয়োগও কমে আসতে পারে।

এই খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাত্র ১০ বছর হলো এই খাত যাত্রা শুরু করেছে। এই খাতের কোম্পানিগুলোকে এখনো প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। নতুন নতুন সেবা চালু করতে হবে। দেশের আর্থিক খাতের ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময়ে কর বাড়িয়ে খাতটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপন করা বাজেটে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর তালিকাভুক্ত না হলে করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো এমএফএস প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। ফলে সবাইকে ৪০ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০১১ সালে প্রথম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) তথা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে এটির নাম বদলে রাখা হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এই সেবায় আসে। এরই মধ্যে আরও অনেক ব্যাংক সেবাটি চালু করেছে, তবে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। অবশ্য ডাক বিভাগের সেবা নগদ এ সেবার বাজারে এসে ভালো সাড়া ফেলেছে। সব মিলিয়ে দেশে বর্তমানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস দিচ্ছে।

করহার বাড়ানোর বিষয়ে বিকাশ ও রকেটের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত করপোরেট কর কার্যকর হলে এখনই হয়তো গ্রাহক পর্যায়ে প্রভাব পড়বে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই খাতের বিনিয়োগ এবং আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’