এলডিসি টুকিটাকি

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার রাতে সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এ সুপারিশ করে। এরপর থেকেই বিষয়টি আলোচনায়।

এলডিসি কারা

ষাটের দশকে স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়নশীল ও উন্নত—এই দুই শ্রেণিতে বিশ্বের সব দেশকে ভাগ করে থাকে জাতিসংঘ। তবে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে আবার যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, তাদের নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হয়। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। মনে রাখতে হবে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ। মূলত এসব দেশ যাতে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে, সে জন্য উন্নত দেশের পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল দেশকে কিছু বাজারসুবিধা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা। বর্তমানে বিশ্বে ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, তিমুর লেসেথো, ইথিওপিয়া প্রভৃতি। এ পর্যন্ত মোট ছয়টি দেশ এলডিসির তালিকা থেকে বের হয়েছে। দেশগুলো হলো মালদ্বীপ, বতসোয়ানা, ইকোইটোরিয়াল গিনি, সামোয়া, কেইপ ভার্দে ও ভানুয়াতু।

সিডিপি কী

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) একটি সহযোগী ফোরাম হলো কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। এই কমিটি কোন কোন দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হবে, তা প্রাথমিকভাবে ঠিক করে থাকে। এ জন্য তিন বছর পরপর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। মূলত পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, মানবসম্পদ এবং মাথাপিছু আয়—এই তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন করা হয়। কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য সিডিপি প্রথমে ইকোসকে সুপারিশ পাঠায়। এরপর ইকোসক তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। একটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেতে পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্ধারিত তিন সূচকের নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে হয়। তবে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করেও এলডিসি থেকে বের হওয়া যায়। সিডিপির সদস্যসংখ্যা ২৪।

এলডিসি ও বাংলাদেশ

১৯৭৩ সাল থেকে এলডিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দর-কষাকষি চালিয়ে যায় বাংলাদেশ। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এই দর-কষাকষিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধাসহ নানা সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে এ বছর এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাম চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সিডিপি। সাধারণত চূড়ান্ত সুপারিশের তিন বছর পরই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তা স্বীকৃতি বা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এবার বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হবে।