কর প্রশাসনকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনার তাগিদ

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার কম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কর প্রশাসনকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে হবে। মানুষ যাতে অনলাইনের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে পারেন, প্রয়োজনীয় সনদ নিতে পারেন এবং টাকা পরিশোধ করতে পারেন, সে জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অংশের গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত সদস্য সম্মেলনে এ প্রস্তাব করা হয়। গতকাল শনিবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ওপর যৌথভাবে পলিসি পেপার উপস্থাপন করেন হাওলাদার ইউনূস অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার আল মারুফ খান এবং স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর (এনবিআর) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মাসুদ সাদিক ও সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া। আইসিএবি সভাপতি মাহমুদুল হাসান এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির।

মূল প্রবন্ধে জানতে চাওয়া হয়, কর প্রশাসনের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৭৫ লাখ ডলারের যে প্রকল্পটি ২০১১ সালে শুরু হয়েছিল, সেটির হালনাগাদ কী? অঞ্চলভিত্তিক (জোন) উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, ওগুলো কি অঞ্চলভিত্তিকই থাকবে, না সমন্বিত হবে? সাতটি জাতীয় ডেটা সেন্টার করার যে কার্যক্রম ২০১৯ সালে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এগুলো ব্যবহার করা যাবে না? জনবলকাঠামোতে কি আইটি বিশেষজ্ঞ থাকবে? জিমেইল বা ইয়াহুর পরিবর্তে কি নিজস্ব মেইল ব্যবহার করা যাবে না? মানোন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কি বাজেট বরাদ্দ থাকবে না?

কর মামলা নিষ্পত্তির জন্য আলাদা বেঞ্চ গঠন, দ্রুত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য সরবরাহের পাশাপাশি যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি হলেই যে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, তা থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয় প্রবন্ধে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে আমরা এগোচ্ছি। তবে তছরুপ এখনো বন্ধ করতে পারিনি।’ পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজস্ব সংগ্রহের সবচেয়ে কম কষ্টদায়ক পদ্ধতি হচ্ছে ভ্যাট। আমি এটা পছন্দ করি। কিছু কিনলে আপনাকে ভ্যাট দিতে হবে। ব্যস্। অথচ এই ভ্যাট নিয়ে কত কথা। আমি তো অর্থ মন্ত্রণালয়েও ছিলাম। চুপচাপ বসে শুনেছি। একেবারে লেজেগোবরে বানিয়ে ফেলেছিল। এত পোড় খাওয়ার পরও এনবিআরের সংগ্রহের ৩৯ শতাংশ ভ্যাট থেকে আসে। এটা আরও বাড়বে।’
এনবিআর সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কোভিডে এনবিআর আটজনকে হারিয়েছে। হোম অফিস থাকলে ভালো হতো। আর আগামী বছর থেকে অনলাইনে টাকা পরিশোধ করা যাবে।

এনবিআরের আরেক সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসার প্রক্রিয়াকে সহজ করা। আবার আমরা যাতে রাজস্ব না হারাই, এটাও তো দেখতে হবে।’

অনেক ব্যবসায়ী সঠিক হিসাব পদ্ধতি সংরক্ষণ করেন না, মাসুদ সাদিক এমন মন্তব্য করলে তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দেন আইসিএবি সভাপতি মাহমুদুল হাসান। বলেন, এখন ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কম। আয়কর বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আইসিএবির চুক্তি হয়েছে। ভ্যাট নিয়েও হবে।