করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই সীমা এখন বার্ষিক তিন লাখ টাকা।

আসছে বাজেট ২০২২–২৩

দেশের আসন্ন বাজেট থেকে সাধারণ করদাতারা তেমন একটা সুখবর পাচ্ছেন না। করমুক্ত ন্যূনতম আয়ের সীমা বৃদ্ধির প্রত্যাশা থাকলেও তা বাড়ছে না। এখনকার মতোই সেই সীমা তিন লাখ টাকায় অপরিবর্তিত থাকছে। দেশের ব্যবসায়ী ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাধারণ করদাতাদের একটু স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির কোনো প্রস্তাব থাকছে না। তবে জাতীয় সংসদে আলোচনাসাপেক্ষে সরকারের উচ্চ মহল শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

সর্বশেষ ২০২০ সালে বাজেট ঘোষণার সময়ে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জেরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেওয়ায় এবং কোভিড সংকটে সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সমাজের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

তিন মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মানে, সংসারের খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির যেসব করদাতার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার কিছু বেশি, তাঁদের খরচ বেড়েছে। কিন্তু চলতি বছর তাঁদের আগের মতোই কর দিতে হবে, যা অনেকের জন্যই বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ালে প্রতিবছরই কিছু লোক করজালে অন্তর্ভুক্ত হন। অন্যদিকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে কিছু করদাতা করজাল থেকে বেরিয়ে যান।

বর্তমানে দেশে ৭৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ লাখের মতো টিআইএনধারী প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন, যদিও সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। রিটার্ন জমা দেন না, এমন টিআইএনধারীর আগামী বাজেটে একটি সুযোগ দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে রিটার্ন না দিলে জরিমানা ও করের ওপর সুদ দেওয়ার বিধান আছে। যাঁরা অতীতে রিটার্ন দেননি, এমন টিআইএনধারীকে রিটার্ন দিলে কোনো জরিমানা বা অন্য কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই ঘোষণা আসতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

এ সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করমুক্ত আয়সীমার একটু ওপরে থাকা করদাতাদের প্রতিটি টাকা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে তাঁদের কষ্ট লাগব করা জরুরি।’

এদিকে আগামী অর্থবছরেও শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকতে পারে। গতবার বাজেট বক্তৃতায় কালোটাকার সুযোগ না দেওয়া হলেও পরে অর্থ বিল পাসের সময় ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। তবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের ডেটা সেবা কেনার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরও ৫ শতাংশ বাড়তে পারে।

সিমেন্ট, সিরামিকস, বেভারেজ, ভোজ্যতেলসহ আমদানিনির্ভর কিছু উৎপাদনশিল্পের ওপর আগাম কর কমানো বা প্রত্যাহার করা হতে পারে। এসব খাতে বর্তমানে ৩ থেকে ৫ শতাংশ আগাম কর বসে।

রপ্তানিকারকদের উৎসে কর বাড়তে পারে

রপ্তানিকারকদের করের বোঝা বাড়তে পারে। তাদের সবার জন্য উৎসে কর বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। এর ফলে বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকদের আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎসে কর দিতে হবে।

বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের শতভাগ রপ্তানিকারকদের দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হয়। ১০০ টাকার রপ্তানি করলে ৫০ পয়সা উৎসে কর হিসেবে কেটে রাখেন কর কর্মকর্তারা। পরে ওই প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক করপোরেট করের সঙ্গে তা সমন্বয় করতে পারে।

এখন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ১২ শতাংশ, তবে কারখানা পরিবেশবান্ধব হলে তা ১০ শতাংশ। অন্য প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ। এই অবস্থায় সার্বিকভাবে করপোরেট করহার কমানোর ঘোষণাও থাকতে পারে। তাহলে উৎসে কর বাড়ালেও বছর শেষে করপোরেট কর কম দিতে হবে।

২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানিকালে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে উৎসে কর বসানো হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়। রপ্তানিকালে উৎসে কর বৃদ্ধি করা হলে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বেশি ভোগেন। দেশে কয়েক হাজার তৈরি পোশাক কারখানা আছে।