করোনাকালে ৭৭ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে

পিকআপে মালপত্র নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন জাকির হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গত ৫ জুন শরীয়তপুরে।
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম সাত মাসে (এপ্রিল-অক্টোবর) স্বল্প আয় ও অনানুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা চাকরি বা উপার্জন হারিয়েছে বেশি। তাতে ৭৭ শতাংশ পরিবারের মাসিক গড় আয় কমেছে। ৩৪ শতাংশ পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা উপার্জন সক্ষমতা হারিয়েছে। দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সে জন্য পরিবারগুলোর মাসিক গড় সঞ্চয় ৬২ শতাংশ কমে গেছে। আর ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ৩১ শতাংশ।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে করোনাকালে বিপরীতমুখী অভিবাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের মধ্যম মানের শহর, উপজেলা ও গ্রামীণ অঞ্চলের জনমিতি, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা–ও তুলে ধরা হয়েছে। ব্র্যাকের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

‘কোভিড-১৯–এর কারণে জনমিতি ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনসমূহ: নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফল গতকাল বুধবার রাতে অনলাইনে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংলাপে প্রকাশ করা হয়।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের প্রোগ্রাম প্রধান লিয়া জেমোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। পরে বক্তব্য দেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডেনিয়েল নাওজোকস এবং ব্র্যাক ইউএসএর পরিচালক (স্বাস্থ্য) অ্যাডাম সোয়ার্টজ।

সংখ্যা ও পরিমাণবাচক উভয় পদ্ধতিতে গত বছরের ১০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এতে ৬ হাজার ৩৭০টি খানা বা পরিবার অংশ নেয়। গবেষণায় গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়কে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা থেকে গ্রামে বা মফস্বলে ফেরত যাওয়া কিংবা দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের পরিবারের ৬১ শতাংশের অন্তত একজন সদস্য করোনায় চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছে। আবার গ্রামাঞ্চল বা মফস্বল শহরে ফিরে আসা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রায় ৭৭ শতাংশ মনে করেন, কাজ বা চাকরি খুঁজে পাওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হবে।

গবেষণায় দেখা যায়, অনেক পরিবার গ্রাম বা মফস্বলে ফিরে আসায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ তৈরি হবে। অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের গড় বয়স ৫-১৬ বছর। পুনরায় স্কুল খোলার পর যদি তারা তাদের পূর্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরত না যেতে পারে, তবে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ফেরত আসা প্রায় ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব এবং ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশের বয়স পঞ্চাশের ওপরে। তারা আগের এলাকায় ফিরে না গেলে স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বিশেষ করে অসংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসীরা অভিবাসন ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাঁদের ঋণের পরিমাণ ৭৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত।