করোনার ক্ষতি কাটিয়ে নতুন উদ্যমে ব্যবসা করছে এ খাত

সিএমএসএমই খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্র বাণিজ্য প্রতিবেদক

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনায় সিএমএসএমই খাত যেভাবে ক্ষতিতে পড়েছিল, সেখান থেকে কি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিএমএসএমই খাত। সারা দেশের সরবরাহব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এ খাতের প্রায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। করোনার প্রকোপ কমার পর প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এ ছাড়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ও অন্যান্য সুবিধার ফলে সিএমএসএমই ব্যবসা প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন সহায়তা পায়। তাতে সিএমএসএমই খাত করোনার ক্ষতি কাটিয়ে পুনরায় নতুন উদ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কম সুদের সরকারি প্রণোদনা তহবিল কি এই খাতের জন্য যথেষ্ট?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: সরকার এ খাতের উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে দেশের সব ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ প্রদান করে। দেশের সিএমএসএমই খাতের সর্বোচ্চসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং খাতের। কিন্তু ট্রেডিং খাতের জন্য সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা সম্ভবপর হয়নি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশের উন্নয়নে সিএমএসএমই খাত বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে কেমন করছে?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সিএমএসএমই খাতের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই খাতের। খাতটি দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি ও দারিদ্র্য বিমোচনই সিএমএসএমই খাতের মূল লক্ষ্য। দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান এ খাতের। এই খাতের উন্নয়নে সরকার ও দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এই খাতে আপনাদের ঋণ ও গ্রাহক কেমন?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণের প্রায় ৫২ শতাংশই সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা ১০ লাখের বেশি সিএমএসএমই গ্রাহককে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছি। সিএমএসএমই–বান্ধব ব্যাংক হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে এসব গ্রাহককে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা। বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকে মোট ৩ লাখ ৯৫ হাজার সিএমএসএমই গ্রাহক ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করছেন। যার মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার গ্রাহকের ঋণসুবিধা চলমান রয়েছে। গত মে মাস শেষে এ খাতে প্রদান করা ঋণের স্থিতি ছিল প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই গ্রাহকদের বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকের ব্যবসার নথিপত্র থাকে না। এ জন্য তাঁরা ঋণসুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এ সমস্যা সমাধানের উপায় কী?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: ব্যবসায়িক নথিপত্র কম থাকার কারণে অনেক সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানই তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পায় না। তবে ব্র্যাক ব্যাংকের আড়াই হাজারের বেশি কর্মকর্তা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবার সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকর্তা গ্রাহকের ব্যবসা–সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নথিপত্র, বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনপত্র ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করে থাকেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের ঋণ প্রদান করা হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোন খাত সবচেয়ে ভালো করছে। দেশের বাইরে তাদের কোনো বাজার আছে কি?

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: সিএমএসএমই খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ট্রেডিং, খাবার ও খাদ্যজাত দ্রব্য, আইটি ফার্ম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ই-কমার্স, ট্রান্সপোর্ট ও বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ব্যবসা বর্তমানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এসব খাতের মধ্যে কৃষিজাত ও খাদ্যজাতীয় পণ্য এবং হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদির বাজার তৈরি হয়েছে দেশের বাইরেও। এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার, নিরবচ্ছিন্ন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা ও সরবরাহব্যবস্থার উন্নয়নে ব্র্যাক ব্যাংক দেশি ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে।