‘কাঁচা বাদাম ও পুষ্পায়’ আগ্রহ কম নারীদের

ছবি: আনোয়ার পারভেজ

বগুড়ায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদবাজার। অভিজাত বিপণিবিতান নিউমার্কেট থেকে ফুটপাত—সবখানেই ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট বেচাবিক্রি। শেষ মুহূর্তে পোশাকের পাশাপাশি জুতা, স্যান্ডেল ও প্রসাধনীর দোকানেও ভিড় বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের জলেশ্বরীতলায় শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক এবং রোমেনা আফাজ সড়কের নামীদামি বিভিন্ন শোরুম, রানার প্লাজা, নিউমার্কেট, আলতাফ আলী মার্কেট, আল আমিন কমপ্লেক্স এবং রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।

এবারের রোজার শুরু থেকেই জমজমাট নিউমার্কেটের বেচাকেনা। নিউমার্কেটের হৃদয় এক্সক্লুসিভ থ্রি-পিস কালেকশনের মালিক মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, গত দুই বছর পর করোনার কারণে ব্যবসা ছিল একেবারে মন্দা। এবার বেচাবিক্রি খুব ভালো। এবারের ঈদের সময়টা গরম থাকায় মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সুতি কাপড়ের থ্রি-পিস।
বগুড়া শহরে মেয়েদের দেশি-বিদেশি সব ধরনের থ্রি-পিস বিক্রি করে রনি ক্লথ স্টোর। শহরের নিউমার্কেট ও রানার প্লাজায় প্রতিষ্ঠানটির তিনটি শোরুম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কালাচাঁদ সাহা বলেন, ‘এবারের ঈদে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ভারত থেকে আনা হয়েছে “কাঁচা বাদাম” ও “পুষ্পা” নামের ভারতীয় থ্রি-পিস। ভারতের ভুবন বাদ্যকরের গানের সঙ্গে মিল রেখে এবার ঈদে বাজারে এসেছে কাঁচা বাদাম। আর বক্স অফিস হিট দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা পুষ্পা নামের পোশাকও বাজারে আসে। ভেবেছিলাম এ দুই পোশাকের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হবে। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি হয়নি।’

তবে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বাহারি পোশাক বাজারে এলেও দাম বেশি। তাই অনেকে পছন্দের শাড়ি বা থ্রি-পিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। গতকাল নিউমার্কেটের শাড়ির দোকান শাড়ি প্যালেসে কথা হয় রাফা নাজনীন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ঈদে বাহারি সব শাড়ি মন কেড়েছে। তবে দাম অনেক বেশি। তাই সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দের শাড়ি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নিউমার্কেটের পাশাপাশি জমজমাট অভিজাত বিপণিকেন্দ্র রানার প্লাজাও। এ বিপণিবিতানে রয়েছে আড়ংয়ের শোরুম। সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ বিপণিবিতানের বিভিন্ন শোরুম ও দোকানে মেয়েদের থ্রি-পিস, টু-পিস, লেহেঙ্গা ছাড়াও বাহারি শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা জানান, এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে অরগানডা, কাতান, বিবেক ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি সুতির থ্রি-পিস। আর শাড়ির মধ্যে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে খাড্ডি বেনারসি, চেন্নাই সিল্ক, কানজিবরণ।

এ ছাড়া শহরের জলেশ্বরীতলার ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতেও শেষ মুহূর্তের কেনাবেচায় রাত-দিন ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। এ এলাকার শহীদ আবদুল জব্বার সড়কের আর্টিসান, শপার্স অ্যান্ড শপার্স, লেন্ড, এমব্রেলা, ইনল্যান্ড মার্ট, ডিমান্ড, টুয়েলভ, ইনফিনিটি, জেন্টল পার্ক, ইজি, মেনস ওয়ার্ল্ড, দর্জি বাড়ি, রিচম্যান ইত্যাদি শোরুমে ভিড় ছিল বেশি। আর্টিসানের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, এ বছর তাঁদের শোরুমে রেকর্ড পোশাক বিক্রি হয়েছে।

নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুদের পোশাকের বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানালেন শপার্স অ্যান্ড শপার্সের এক বিক্রয়কর্মী। তিনি বলেন, করোনার পর এবার পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে। তাই বিক্রি বেশ ভালো। তবে শিশুদের পোশাকের সংগ্রহ কম, দামও অনেক বেশি। তারপরও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডোনিস বাবু তালুকদার বলেন, শুধু জলেশ্বরীতলা এলাকায় গড়ে ওঠা অভিজাত ফ্যাশন হাউস ও শোরুমগুলোতে এবারের ঈদে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।