কিউকমের গ্রাহকের টাকা আটকে আছে ‘ফোস্টারে’

গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফোস্টার পেমেন্টস টাকা আটকে রাখায় গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে কিউকম।

ই–কমার্সের লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে আটকে আছে গ্রাহকের ৪২০ কোটি টাকা। এ টাকার দাবিদার ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ডটকম। যাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পণ্য ও টাকা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফোস্টার পেমেন্টস তাদের টাকা আটকে রেখেছে।

এ অবস্থায় ৪২০ কোটি টাকা ফেরত পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে কিউকম। ১৬ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম জানায়, ফোস্টার পেমেন্টস নামক একটি পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান কিউকমের গ্রাহকদের ৪২০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। তবে ফোস্টার পেমেন্টসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আছে বলে জানান তিনি।

কিউকমের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফোস্টার পেমেন্টসের কাছে কিউকমের গ্রাহকদের পরিশোধ করা ৪২০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার পরও তারা গেটওয়েটির কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল কিউকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রিপন মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ৬০০ জন গ্রাহকের প্রায় ১০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে ফোস্টারের কাছে অনুরোধ করলেও প্রতিষ্ঠানটি সাড়া দিচ্ছে না। তারা টাকা ছাড় করলে গ্রাহকেরা তাঁদের পাওনা বুঝে পাবেন।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে কিউকমডটকম। ইভ্যালির মতো তারাও বিশাল ছাড়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। গ্রাহকদের সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কিউকমের বিরুদ্ধেও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে।

ফোস্টার পেমেন্টস ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, এটি এসএসডি টেক নামক একটি কোম্পানির পেমেন্ট সার্ভিস উইং। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরেও তারা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়। রাজধানীর গুলশানে উদয় টাওয়ারে তাদের কার্যালয়। ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোনে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফখরুল ইসলামকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা দিলেও কোনো জবাব দেননি।

কিউকমের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

মিরপুরের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম গত ১৬ জুন ৭০ শতাংশ ডিসকাউন্টে স্যামসাং ব্র্যান্ডের ৫৫ ইঞ্চির একটি টেলিভিশন কিউকমডটকম থেকে কেনার জন্য টাকা দেন। তাঁর অভিযোগ, ২১ দিনের মধ্যে পণ্য পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনি পণ্য বা টাকা কোনোটিই পাননি। এ ব্যাপারে কিউকমের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির গত শুক্রবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা (ভেন্ডর) পণ্য দেননি। ম্যাঙ্গো টিভি ও এইচ পাওয়ার বাইক নামের পণ্য সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের কাছে টাকা দেওয়া হলেও পণ্য পায়নি কিউকম।

গ্রিন ইলেকট্রনিকস নামের প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাঙ্গো টিভির ক্রয়াদেশ দেয় কিউকম। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের ডিলার মো. মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, কিউকম থেকে ম্যাঙ্গো টিভির ক্রয়াদেশ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় তাঁরা পণ্য দিচ্ছেন না।

এদিকে নিউ গ্রামীণ মোটরস নামের পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, ৭২টি মোটরসাইকেল সরবরাহ দিতে গ্রাহকের একটি তালিকা পাঠিয়েছে কিউকম। ৩৮টি সরবরাহ দেওয়া হয়। কিন্তু কিউকমের ওয়্যারহাউসে না দিয়ে সরাসরি গ্রাহককে পণ্য দেওয়ায় কিউকম তাঁদের ওপর নাখোশ হয়। তিনি দাবি করেন, ৫৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্রয়াদেশ দিয়ে ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে কিউকম।

রিপন মিয়া কিউকমের এমডি হলেও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এর চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী। আরজেএসসিতে দেওয়া আইয়ুব আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ওই প্রান্ত থেকে একজন রিসিভ করে জানান, ‘আমি আইয়ুব আলীর বাবা মো. জসিম উদ্দিন।’