কোভিড নারী, তরুণ, দরিদ্রদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে শুধু অর্থনৈতিক সংকটই সৃষ্টি করেনি, সেই সঙ্গে লাখো মানুষের প্রাণহানিও ঘটিয়েছে। এতে অনেক দেশে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। আর এটি নারী, তরুণ, দরিদ্র এবং অনানুষ্ঠানিক ও যোগাযোগ নিবিড় খাতে কাজ করা লোকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

আইসিসি বাংলাদেশের ২৬তম বার্ষিক কাউন্সিলে নির্বাহী পর্ষদের প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন। ভার্চ্যুয়ালি গত রোববার এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

মাহবুবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশকে সীমিত সম্পদ নিয়েও দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার একটি আকর্ষণীয় স্তরে পৌঁছায়। মাথাপিছু আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বসেরাদের পর্যায়ে রয়েছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখ শরণার্থীর বোঝা কাঁধে নিতেও বাধ্য হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে আইসিসিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে সবাই দেশের চিত্তাকর্ষক প্রবৃদ্ধি এবং বিকাশ থেকে সমানভাবে উপকৃত হয়নি। আর একটি চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম ঢাকা ও চট্রগ্রামের মতো বড় বড় শহরে কেন্দ্রীভূত রয়েছে, যার ফলে গ্রাম ও শহরের বিশাল বিভাজন এবং নগরে দারিদ্র্য বেড়েছে। এই অবস্থায় অর্থনৈতিকভাবে নিচের দিকে থাকা লোকদের কাছে প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের ফল পৌঁছানোই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশে ৯৬ শতাংশ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) তাঁদের আয় হারিয়েছেন। দেশের ৮২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ‘জাতীয় ছুটির দিনগুলোতে’ ব্যবসায়িকভাবে মাঝারি ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং গড়ে ৬৭ শতাংশ ভোক্তা কমেছে। তবে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশ ভালোভাবে মহামারি মোকাবিলা করেছে। আর যেহেতু রপ্তানি আয় বেড়েছে, তাই দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, আইসিসি প্যারিস জি-৭ জোটের সদস্যদের এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহের জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। জি-৭ নেতারা বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশগুলোতে কয়েক শ মিলিয়ন ডোজ টিকা বিনা মূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মানুষের বিপরীতে ভ্যাকসিনের এ সংখ্যা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?