গুগল–আমাজন কর দিতে চায়

এনবিআরকে পিডব্লিউসি বলেছে, গুগল-আমাজনের কাছ থেকে কর নেওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

গুগল ও আমাজনের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কর পরিশোধের ভালো ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশ। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে ব্যবসাও করতে চায়, করও দিতে চায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সংস্থাটি আরও বলেছে, যুগ এখন ডিজিটাল অর্থনীতির। বিদেশি কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, কর দিতে পারে এবং নিজ নিজ দেশে গিয়ে স্বচ্ছতা দেখাতে পারে, সে ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

ঢাকার সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় পিডব্লিউসির পাশাপাশি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগও (সিপিডি) অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সদস্য আলমগীর হোসেন, মাসুদ সাদিক ও সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া; পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মামুন রশীদ, পরিচালক ইয়ামিন জাহাঙ্গীর ও ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন এবং সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে পিডব্লিউসি বাংলাদেশ এনবিআরকে ৩০ পৃষ্ঠার লিখিত প্রস্তাব দেয়। এতে বলা হয়, একটি কোম্পানি আরেকটি কোম্পানিকে কিনে নেওয়ার (অধিগ্রহণ) এবং একটি কোম্পানি আরেকটির সঙ্গে স্বেচ্ছায় মিলে যাওয়ার (একীভূত) অবস্থা তৈরি হয়নি দেশে। অথচ বিশ্বে এ ব্যবস্থা জনপ্রিয়। বাংলাদেশকেও দ্রুত এ ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। তখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও এ দেশে আসতে উৎসাহিত হবে।

বৈশ্বিক চর্চার নির্ধারিত মাত্রার বাইরে গিয়ে দেশি কিছু খাদ্যপণ্য ও ওষুধ কোম্পানি অন্যায্য মাত্রায় প্রমোশনাল ব্যয় করে বলে এনবিআরকে জানানো হয়। বলা হয়, দেশে আইনকানুন এমনভাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে, বিদেশি কেউ স্বল্প সময়ের জন্য এ দেশে এসে কর দিতে গিয়ে বিব্রত হন।

আবার অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) কাছ থেকেও দুবার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) কাটা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল অর্থনীতি বিশ্বজুড়ে বড় হচ্ছে, বাংলাদেশকেও সে দিকে যেতে হবে। বাড়তি রাজস্ব আয়ের জন্য এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলকে ঢেলে সাজানো ও বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করার দাবি জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম কিছু বিষয়ে জবাব দেন। আবার নিজ থেকেও কিছু প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল আয় সংগ্রহে অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করতে গেলে পুরোটাই ভেস্তে যেতে পারে।

করজাল বড় করতে গাড়ি-বাড়ির মালিকদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে। যেমন গাড়ির মালিক কারা? এই মালিকেরা রিটার্ন দাখিল করেন কি না, দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদের অর্থের উৎস কী, এসব আমরা দেখব।’ তিনি জানান, বাড়ির মালিকদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বাড়ির হোল্ডিং নম্বর অনুযায়ী মালিকদের চিহ্নিত করা হবে। সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, সৎ করদাতাদের বেশি কর দিতে হয়, আর অপ্রদর্শিত আয়ের মালিকদের দিতে হয় কম; এ ব্যবস্থা সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। এটা বন্ধ হোক। তিনি আরও বলেন, সম্পদের ওপর কর আরোপের চিন্তাও করতে পারে এনবিআর।

এনবিআর চেয়ারম্যান অবশ্য বলেন, সম্পদের ওপর সারচার্জ নেওয়া হয়। কর আরোপ করলে সম্পদ বিক্রি করে তা দিতে হয় কি না, সেটাও এক প্রশ্ন। পৈতৃক বাড়ির দাম বাড়লেও এ থেকে আয় হয় না বলে উদাহরণ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

পোশাক খাত

বিকেলে প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করার দাবি জানান। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ ও রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং করপোরেট করের বর্তমান হার আগামী পাঁচ বছর বলবৎ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।