ঘরে বসেই শুল্ক দেওয়া যাবে

আপনি বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি করেছেন। কিন্তু শুল্ক-কর পরিশোধে এখন ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। পে–অর্ডার, চালান এসব তৈরি করে সরকারি কোষাগারে টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু দিন বদলে যাচ্ছে। এখন থেকে ঘরে বসেই শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপের দিন শেষ হচ্ছে। চালু হচ্ছে শুল্ক-কর পরিশোধের ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা।

একজন আমদানিকারক পণ্য আমদানির বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর শুল্ক কর্মকর্তারা শুল্কায়নপ্রক্রিয়া শুরু করে জানিয়ে দেন, তাঁর কত টাকা শুল্ক-নির্ধারিত হয়েছে। তারপর আমদানিকারক সেই পরিমাণ শুল্ক-কর ঘরে বসেই নিজ নিজ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন। টাকা জমা হওয়ার পর শুল্ক বিভাগের সার্ভার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ মিলবে। সেই রসিদের ভিত্তিতেই তিনি মাল খালাস করে নিয়ে আসবেন।

এখন পণ্যের চালানের শুল্ক নির্ধারিত হলে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দেন আমদানিকারক। সেই টাকা ঠিকমতো জমা পড়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার পরই শুল্ক কর্মকর্তারা মাল খালাসের অনুমতি দেন।

আগামী মাস থেকে ঢাকা কাস্টমস হাউসে পরীক্ষামূলকভাবে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ক-কর হলেই ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে যেকোনো পরিমাণ শুল্ক-কর ই-পেমেন্ট করতে হবে।

নতুন ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে শুল্ক-কর পরিশোধের জাল কাগজপত্র জমার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের কাস্টমস হাউসগুলোতে ‘বদি আলম’দের দৌরাত্ম্য যেমন কমবে, তেমনি পণ্য খালাসের সময়ও কমে যাবে। অনৈতিক লেনদেনের সুযোগও সীমিত হবে। দেশের বৃহত্তর শুল্ক আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দালালশ্রেণির লোক আছে, যাঁদের বদি আলম বলা হয়। তাঁরা আমদানিকারকের নথিপত্র নিয়ে শুল্ক কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে দৌড়াদৌড়ি করেন, ব্যাংকেও যান। মোট কথা, দ্রুত মাল খালাসে সহায়তা করেন তাঁরা।

দেশের সব কাস্টমস হাউসে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করার একটি পথরেখা তৈরি করেছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে ঢাকা কাস্টমস হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা চলবে। শুধু আমদানি নয়; কোনো পণ্য রপ্তানি করলে শুল্ক-কর থাকলে তা ই-পেমেন্টে পরিশোধ করা যাবে।

নতুন অর্থবছর অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে সারা দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে এই ব্যবস্থা চালু হবে। প্রথম ছয় মাস একটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ক-কর আরোপ হলে ই-পেমেন্ট করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সব আমদানিকারকের জন্য ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৩ মার্চ এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

আমদানির কাগজপত্র দাখিলসহ পুরো শুল্কায়নব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হলে আরও ভালো হতো। কারণ, শুল্ক কার্যালয়ে গিয়ে আমদানিকারকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনো কখনো অনৈতিক লেনদেনও করতে হয়।
মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি, বিকেএমইএ

ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। টাকা পরিশোধ না করার মতো জালিয়াতি বন্ধ হবে। এতে শুল্ক বিভাগের যেমন সুবিধা হবে, তেমনি আমদানিকারকও সহজেই ঘরে বসে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন।’

জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউসে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়। এসব বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ছোট-বড় পণ্যের চালানগুলো খালাস হয়। আমদানির হিসাবে, ঢাকা কাস্টমস হাউস হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা। বহুজাতিক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ই-পেমেন্ট ব্যবস্থায় বেশি আগ্রহী বলে জানা গেছে।

নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে আমদানিকারকদের সুবিধা হবে, তাঁরা উপকৃত হবেন। আমদানির কাগজপত্র দাখিলসহ পুরো শুল্কায়নব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হলে আরও ভালো হতো। কারণ, শুল্ক কার্যালয়ে গিয়ে আমদানিকারকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনো কখনো অনৈতিক লেনদেনও করতে হয়।