চা–শ্রমিকদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করতে হবে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আকাঙ্ক্ষা অর্থনীতির একটি উপাদান। দেশের চা-শ্রমিকদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করতে হবে। তাঁরা যেন নিজেদের ভাগ্যবিড়ম্বিত বলে মনে না করেন। চা–শ্রমিকদের মূলধারার জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যাবে না। এতে এ শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হবে।

আন্তর্জাতিক চা দিবস উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এ কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ শুক্রবার সকালে এ সভার আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)। আজকের সভায় চা–শ্রমিক, চা–বাগানের মালিকপক্ষ, সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। চা–শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি খাতের প্রতিনিধিদের আলোচনায় অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চা–শ্রমিকেরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। কিন্তু দেশের অন্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের ভিন্নতা আছে। জাতিসত্তা, ভাষা ইত্যাদি নানা নিরিখে চা জনগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে মূলধারার মানুষের ভিন্নতা রয়েছে। আর এসব ভিন্নতা তাঁদের অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এ বিচ্ছিন্নতাকে তাঁদের প্রান্তিকতার বড় কারণ। এখান থেকে তাঁদের বের করে আনতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চা দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এ শিল্পকে নিয়ে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে। এখানে শ্রমিকের স্বার্থ যেমন দেখতে হবে, তেমন মালিকের স্বার্থও বিবেচনায় নিতে হবে। শিল্পের বিকাশে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মিলিত সমঝোতা দরকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, করোনা মহামারির এ সময়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিকাশে জোর দেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির অন্যতম খাত চা–শিল্প। এ সংকটকালে এ শিল্পের উৎপাদন সচল রাখা জরুরি। আর মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের পারস্পরিক সংলাপ ও সহযোগিতায় এটা সম্ভব।

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর বলেন, চা জনগোষ্ঠীর মানুষের দারিদ্র্য, তাঁদের আয়, তাঁদের পেছনে মালিকের ব্যয়—এসব বিষয়ে উন্নততর ও গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান দরকার। চা–শিল্পের অর্থনীতির দিকটির উন্নতির পাশাপাশি শ্রমিকদের সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন ‘চা–শ্রমিকের সুরক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও জবাবদিহিতা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পড়েন। প্রবন্ধে বাংলাদেশের চা–শিল্পের বর্তমান অবস্থা, শ্রমিকের মজুরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রম আইনের নানা দিক তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম চা–শিল্প নিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে চা–বাগানের মালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, ‘চা–শিল্পে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক ভালো। শ্রমিকদের ছাড়া আমরা চলতে পারব না। চা–কৃষি ও শিল্পের একটি মিলিত রূপ। এ শিল্পে ওঠানামা আছে।’

অনুষ্ঠানে চা সংসদের লেবার অ্যান্ড ওয়েলফেরার কমিটির আহ্বায়ক তাহসিন এ চৌধুরী বলেন, এখন চা–শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা হলেও আসলে প্রতিদিন শ্রমিক প্রতি মালিকের ব্যয় ৪০০ টাকা। মাসে শ্রমিকের পেছনে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
তবে তাহসিন চৌধুরীর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি। তিনি বলেন, এ ব্যয় ২০০ টাকার বেশি হবে না। রামভজন কৈরী শ্রম আইনে চা–শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী ধারাগুলোর বিলোপ দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ , প্রবীণ শ্রমিকনেতা তপন দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, জুড়ি ভ্যালির চা–শ্রমিক শ্রীমতি বাউরি প্রমুখ।