‘চুরি ডাকাতির টাকাও সাদা করবে, তা মানব না’

‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয় ও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের মধ্যে পার্থক্য থাকা উচিত। চুরি-ডাকাতির টাকাকে অপ্রদর্শিত অর্থের নামে ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করবে, তা মানব না। এতে সৎ করদাতারা বঞ্চিত হন।’ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

আজ মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত আসন্ন বাজেট নিয়ে অনলাইন আলোচনা সভায় রিজওয়ান রাহমান এ কথা বলেন।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয় ও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের মধ্যে পার্থক্য থাকা উচিত।
রিজওয়ান রাহমান, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ‘আমরা ৩২ শতাংশ কর দিই। আর কালোটাকার মালিকেরা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যান, এটা হবে না। ব্যবসায়িক মনোভাব বিবেচনা করলে, আমি আগামী বছর ৩২ শতাংশ হারে কর দেব না। কিন্তু পরের বছর ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করে ফেলব। ২২ শতাংশ কম কর দিতে হবে—এটাই আমার লাভ।’

অনুষ্ঠানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবিরও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে সোচ্চার হন। তাঁর মতে, এতে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হয়। নিহাদ কবির জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে সর্বোচ্চ হারে কর দিয়ে আসছেন। আর কালোটাকার মালিকেরা মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয় বৈধ করছেন। তিনি বলেন, ‘দামি রেস্তোরাঁ ইজুমিতে কোন ব্যবসায়ী খেতে গেলেন, তা না দেখলেও হবে। করপোরেট কর কমালে এমনিতেই বিনিয়োগ বাড়বে।’

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হ‌ুমায়ূন কবির। আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, হিসাববিদেরা অংশ নেন।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে নিয়মিত করদাতাদের কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

চলতি বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত কালোটাকাও ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এলাকাভেদে আয়তন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাট কিনেও কালোটাকা সাদা করা যাবে। এভাবেই এবার ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কেউ কালোটাকা সাদা করলে এনবিআর ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) কোনো সংস্থাই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে না।

এদিকে বক্তারা করপোরেট কর কমিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। আবার আগামী বাজেটে যেন গতানুগতিক না হয়, করোনাসংকট মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশও করেন তাঁরা। তাঁদের প্রস্তাব হলো, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রতি ‘আচ্ছন্ন’ না থেকে করোনাসংকট উত্তরণে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষাসহ অগ্রাধিকারভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে।