চোখ রাঙাচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি

টানা তিন মাস কমার পর ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। রোজা সামনে রেখে চলতি মার্চেও চাল, ডাল, তেল, চিনির দাম বাড়ছে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

তিন মাস কমার পর গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে। চলতি মার্চ মাসেও চালসহ সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মাসের মাঝামাঝি শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। এর আগেই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে শুরু করেছে।

সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম দিয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। আর মূল্যস্ফীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। কারণ, তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। আর খাদ্যপণ্য কিনে যত টাকা খরচ হয়, এর ৫০-৬০ শতাংশ চলে যায় চালের পেছনে। তাই মোটা চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর বেশি প্রভাব পড়ে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। রোজা আসছে, বিশ্ববাজারে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। আবার করোনার কারণে কর্মসংস্থানের সংকট রয়েছে। অনেকের আয়ও কমেছে। এমন অবস্থায় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক মানুষের প্রকৃত আয় আরও কমছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে নতুন গরিবেরা সবচেয়ে বেশি চাপে থাকবে।’

আবার নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্যও সুখবর নেই। ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়া দুধ, মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামও বাড়তির দিকে। পবিত্র রমজানে ডালের পেঁয়াজি যেমন চাই, তেমনি মিষ্টান্নের চাহিদা থাকে। তাই রোজার মাসে এসব পণ্যের দাম কমার সুযোগ কম বলেই মনে করা হচ্ছে। নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় গরিব মানুষের পাশাপাশি নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কপালেও ভাঁজ ফেলছে। কারণ, রোজার মাসে ডাল, চিনি, গুঁড়া দুধ, তেল, আটা, মুরগি—এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় রয়েছেন সবাই।

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা ডি এম ফেরদৌস ইফতেখার ছোটখাটো ব্যবসা করেন। আলাপকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগেই চালের দাম বেড়েছে। আবার তেল, চিনি, ডালের দামও বাড়তির দিকে। করোনার মধ্যে এমনিতেই আয় কমেছে। তাই সাহ্রি, ইফতারের পেছনে খরচ কমাতে হবে।

ছয় মাসের মূল্যস্ফীতি

খাদ্যপণ্যের ছয় মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশে উঠেছিল। তবে পরের তিন মাস তা কমেছিল। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে তা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমে আসে। আর জানুয়ারি মাসে আরও কমে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়। তিন মাস কমার পর ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাকা উল্টো ঘুরতে শুরু করে। এই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪২ শতাংশে। চলতি মার্চ মাসেও প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এপ্রিল মাসে তো রোজা শুরু হবে।

সার্বিক মূল্যস্ফীতিও এখন ঊর্ধ্বমুখী পথ ধরেছে। গত অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ। টানা কমে তা গত জানুয়ারিতে ৫ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তা আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশে পৌঁছায়।