ছুরি-চাকুর ব্যবসায় মন্দা

আজ বাদ দিলে ঈদুল আজহার আর মাত্র দুদিন বাকি। এ সময় একদিকে যেমন জমে ওঠে পশুর হাট, তেমনিই ঝনঝন করে ওঠে কামারবাড়ি। পুরোদমে চলে ছুরি, চাকু ও চাপাতি বানানোর কাজ। কিন্তু এ বছর ক্রেতাশূন্য ছুরি-চাকুর দোকান, কাজের চাপ নেই কামারদের দোকানেও।

কারওয়ান বাজারের পূর্ব প্রান্তে রেললাইন ঘেঁষে গোটা বিশেক দোকানে বিক্রি হয় ছুরি, চাপাতি, কুড়াল, দা ও বঁটি। বছরের পুরোটা সময় সেখানে তেমন আলোড়ন না থাকলেও সাধারণত কোরবানির ঈদের আগে ক্রেতাদের চাপ দেখা যায়। দোকানি আরমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার আগে কোরবানির ঈদের সময় প্রতিদিন লাখ টাকার বিক্রি করেছি। এখন সারা দিনে ১০ হাজার টাকার বিক্রিও নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এবার কোরবানি কম হবে।’

এ বাজারের একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদের এই মৌসুমে প্রতি দোকানে অন্তত ৫০ ক্রেতা আসতেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো দোকানে ৬ জন, কোনো দোকানে ১০ জন, কোনো দোকানে ১৪ জন ক্রেতা এসেছেন।
ছুড়ি-চাপাতির দোকানের পেছনেই কামারপট্টি। সেখানে সিটি করপোরেশন অনুমোদিত দোকান আছে ১২টি। এ বাজারের নাম কর্মকার মার্কেট।

এই দোকানগুলোতেও তৈরি হয় কোরবানির পশু কাটাকাটির সরঞ্জাম। সেখানে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই অলস সময় কাটাচ্ছেন কর্মকাররা। কারও হাতে নতুন কাজ নেই। কারণ, আগের পণ্যই বিক্রি হয়নি। মাঝে টুকটাক দু-একজন কাজ করছেন, তবে নতুন নয়, পুরোনো দা-বঁটি মেরামত করছেন তাঁরা।

ব্যবসায়ী মো. সুজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানির সময় সাধারণত যা বিক্রি হতো, তার মাত্র ৩০ শতাংশ বিক্রি করতে পারছি। অথচ ঈদের আগের শুক্রবার আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও পেতাম না।’

গত রোজার ঈদের পর থেকেই কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই ব্যবসায়ী। কোরবানি উপলক্ষে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। কিন্তু ‘চালানের টাকা উঠবে কি না, তা নিয়েই চিন্তায় আছি’, বললেন মো. সুজন। তাঁর প্রতিষ্ঠান জনতা ট্রেডার্সে কাজ করেন ১১ কর্মচারী, যাঁদের মধ্যে ৪ জন মূল কারিগর আর বাকিরা সহযোগী।

কারওয়ান বাজারের এই কর্মকার মার্কেটে প্রত্যেক কারিগরের দৈনিক মজুরি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। আর সহযোগীদের দৈনিক ৮০০ টাকা। এর বাইরে খাওয়ার খরচও বহন করতে হয় দোকানের মালিককে।

কামারপট্টির আরেক ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, ফরমাশ কম আসায় ব্যবসার ক্ষতি বাড়ছে। দোকান বন্ধ রাখলে অন্তত কর্মচারীদের খরচ বহন করতে হয় না।

কারওয়ান বাজারের কর্মকার মার্কেটে অন্তত ১২০ কর্মকার কর্মরত। তাঁরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে মজুরি পান। এপ্রিল মাসের কঠোর বিধিনিষেধের সময় তাঁদের সবাইকে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার ঈদুল ফিতরের পর তাঁরা কাজে ফেরেন।

এখানে কাজ করা কামার মো. জসিম মিয়া বলেন, ‘গত বছর থেকে আয়-রোজগার বলতে গেলে নেই। ভেবেছিলাম, এ বছর কোরবানির পর অবস্থা কিছুটা ফিরবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, মহাজন আবার গ্রামে পাঠিয়ে দেবেন।’