ছয় প্রকল্পের পাঁচটিই শেষ হচ্ছে না নির্ধারিত সময়ে

আগামী জুনে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ছয় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু একটি ছাড়া বাকিগুলো শেষ হতে আরও এক বছর লাগবে।

ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য সহজ করতে সংশ্লিষ্ট স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এখন ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের যে অগ্রগতি, তাতে নির্ধারিত সময়ে শেষ হতে পারে মাত্র একটি প্রকল্প। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। এ কারণে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পাঁচটি প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তের ‘শূন্যরেখা’র ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে ভারতীয় অংশ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এ কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ জট খুলতে শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার চূড়ান্ত করতেও অনেক সময় চলে গেছে। এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয়নি।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় যে ছয়টি প্রকল্প চলমান আছে, সেগুলো হলো ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দর; হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দর; জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর; ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার ভোমরা, সিলেটের শেওলা, খাগড়াছড়ির রামগড় ও বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নের কাজও চলমান আছে।

নো ম্যান্স ল্যান্ডের (শূন্যরেখা) ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অবকাঠামো তৈরিতে আপত্তি জানায়।
মো. আলমগীর, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ

সব প্রকল্প ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দর উন্নয়নের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে। বাকি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি মাত্র ৯ থেকে ৩৬ শতাংশ। প্রকল্পগুলো শেষ হলে পণ্যবাহী ট্রাক সহজেই মালামাল খালাস ও বোঝাই করতে পারবে।

কেন যথাসময়ে প্রকল্প শেষ হচ্ছে না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বলেন, ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডের (শূন্যরেখা) ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অবকাঠামো তৈরিতে আপত্তি জানায়। অনেক
সময় তাঁরা জানতে চান, কী অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। নকশা দেখতে চান। আমরা এসব সমস্যার সমাধান করেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’

১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, নোম্যান্স ল্যান্ডের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। পরে ২০১৭ সালে দুই দেশের মতামত বা অনাপত্তি সাপেক্ষে অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়। এ নিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতার যৌথ বিবৃতির (জয়েন্ট কমিউনিক) মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করার কথা বলা হয়। এ জন্য উভয় দেশ নিজেদের অবকাঠামো নকশা পরস্পরকে দেখিয়ে নেবে।

বেনাপোলের কার্গো টার্মিনালের অগ্রগতি সবচেয়ে কম

বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। ২৯০ কোটি টাকার এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ হিসাবে, গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আড়াই বছরে খরচ হয়েছে মাত্র ২৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের পার্কিং ইয়ার্ড, সড়ক ও ভূমি উন্নয়নের দরপত্র প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।

হবিগঞ্জে বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়নে ২০১৭ সালে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের গুদামঘর, শেড, ওয়াচ টাওয়ারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অধিগ্রহণ করা জমি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ ছিল।

এ কারণে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। ধানুয়াকামালপুর স্থলবন্দর প্রকল্পেরও একই অবস্থা। ১৯ কোটি টাকার প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ। তবে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কিছুটা এগিয়েছে। তৈরি হয়েছে ওজন মাপার যন্ত্র, ইয়ার্ডসহ প্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ৩৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার ভোমরা, সিলেটের শেওলা, খাগড়াছড়ির রামগড় ও বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নেও অগ্রগতি নেই।