টানা পতনে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

টানা ছয় দিনের পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমেছে ২৭১ পয়েন্ট। লেনদেন নেমেছে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

ছয় দিনের একটানা পতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আতঙ্কে গতকাল সোমবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল শেয়ার বিক্রির প্রবণতা। এ কারণে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮৭ শতাংশেরই দরপতন ঘটেছে। পাশাপাশি লেনদেন নেমে এসেছে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ অক্টোবর সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠার পরের দিন থেকে পতন শুরু হয়। তাতে টানা ছয় দিনের পতনে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি কমেছে ২৭১ পয়েন্ট বা পৌনে ৪ শতাংশ। এর মধ্যে গত দুই দিনে কমেছে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি গতকাল দিন শেষে কমে নেমে এসেছে ৭ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। গত দেড় মাসের ব্যবধানে এটিই ডিএসইএক্স সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ হাজার ৭৫ পয়েন্টের অবস্থানে ছিল।

বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা পতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দেয়। এ কারণে গতকাল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যায়। সূচক যত কমতে থাকে, বিক্রির চাপও তত বাড়তে থাকে। তাতে একপর্যায়ে ডিএসইএক্স সূচকটি একপর্যায়ে ১২৭ পয়েন্ট বা পৌনে ২ শতাংশ কমে যায়। ব্যক্তি পর্যায়ের সম্পদশালী বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল বিক্রির প্রবণতা।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এপ্রিল থেকে একটানা উত্থানে বাজারে সূচক বেড়েছে প্রায় ২০০০ পয়েন্ট। এতে বেশির ভাগ শেয়ারের দামই বেড়েছে। তার মধ্যে কিছু শেয়ারের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন বাজার পড়তে শুরু করায় সবাই মুনাফা তুলে নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।

বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, বাজার গত কয়েক মাসে বেশ বেড়েছে। তাতে কমবেশি অনেকের কেনা শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা ছিল। কয়েক দিন বাজার কমতে থাকায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে যতটা পাওয়া যায়, সেই মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। বাজার যখন কমতে থাকে, তখন কার আগে কে শেয়ার বিক্রি করবেন সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এ ছাড়া কিছু কোম্পানির পরিচালক ঘোষণা দিয়ে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করছেন। তারও একটি প্রভাব বাজারে রয়েছে।

এদিকে বড় ধরনের পতনের কারণে গতকাল লেনদেনও অনেক কমে গেছে। দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা, প্রায় ৩ মাসের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই ডিএসইতে ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কিছু অর্থ এসএমই কোম্পানিতে বিনিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়া সুকুক বন্ডেও কিছু বিনিয়োগ গেছে। সেকেন্ডারি বাজার থেকেই এসব অর্থ গেছে। এ কারণে সেকেন্ডারি বাজারে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। তবে একটানা যেভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে, তাতে কিছুটা মূল্য সংশোধন হওয়ায় ঝুঁকি কিছুটা কমেছে।

অপর এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, কিছু শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কোনোভাবেই টেকসই নয়। এসব কোম্পানির জন্য পুরো বাজারেই একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। তাই টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।