দস্যুতামুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা

ফাইল ছবি

করোনার সময় বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক জাহাজে দস্যুতা বা ডাকাতির ঘটনা কমেছে। এরপরও প্রতিবেশী ভারত, সিঙ্গাপুর প্রণালি, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের জলসীমায় ৬৮টি সশস্ত্র ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই তালিকায় নেই বাংলাদেশ।

দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় সমুদ্রগামী জাহাজে এ বছর প্রথম ছয় মাসে কোনো ডাকাতির ঘটনা বা ঘটনার চেষ্টা হয়নি। গত বছর একই সময়ে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সম্প্রতি সংগঠন দুটি আলাদাভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বন্দর,কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর তদারকি বৃদ্ধির কারণেই মূলত বন্দর জলসীমায় এবার কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। এর ফলে বন্দরপথে চলাচলরত জাহাজের ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কমবে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান,চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দর

বন্দর জলসীমায় চলাচলরত দেশি–বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি–ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটায় বহির্বিশ্বে এ বন্দরের জলসীমা নিরাপদ হিসেবে সুনাম বাড়বে। বিদেশি জাহাজের নাবিকেরাও এ জলসীমাকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর,কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর তদারকি বৃদ্ধির কারণেই মূলত বন্দর জলসীমায় এবার কোনো দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। এর ফলে বন্দরপথে চলাচলরত জাহাজের ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কমবে। তাতে পণ্য পরিবহনের খরচও কমবে।

দেশের জলসীমার উপকূল থেকে সাগরের দিকে ১২ নটিক্যাল মাইল এলাকা পর্যন্ত নজরদারি করে কোস্টগার্ড। আর ১২ নটিক্যাল মাইলের পর থেকে দেশের সমুদ্রসীমানা পর্যন্ত নজরদারি করে নৌবাহিনী।

বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা ভিটিএমআইএসের মাধ্যমে সচিত্র তদারক করা হয়। এ সময় সন্দেহজনক কোনো নৌযানের উপস্থিতি দেখলে বন্দর থেকে কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। এরপর কোস্টগার্ড দ্রুতগতির নৌযানে করে ঘটনাস্থলে গিয়ে তা প্রতিরোধ করে।

দেশের জলসীমার উপকূল থেকে সাগরের দিকে ১২ নটিক্যাল মাইল এলাকা পর্যন্ত নজরদারি করে কোস্টগার্ড। আর ১২ নটিক্যাল মাইলের পর থেকে দেশের সমুদ্রসীমানা পর্যন্ত নজরদারি করে নৌবাহিনী। শুধু বন্দরই নয়, বন্দরের বাইরেও বাংলাদেশের জলসীমায় দস্যুতা বা চুরি–ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। মূলত বন্দর, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর তদারকিতে এবার সাগরে দেশি–বিদেশি জাহাজে চুরি–ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক জাহাজে ৫৭টি ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর তা ৩৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৭টি। বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ চীন সাগর এবং সুলু সাগরে কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।

জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো বা আইএমবি তাদের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর প্রথম ছয় মাসে বিশ্বে বাণিজিক জাহাজে ৯৮টি চুরি–ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে তা কমে হয়েছে ৬৮টি। এর মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমা বা চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় একটি ঘটনাও ঘটেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী অপর আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য রিজিওনাল কো–অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট অন কমব্যাটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি অ্যাগেইনেস্ট শিপস ইন এশিয়া বা রিক্যাপের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক জাহাজে ৫৭টি ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর তা ৩৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৭টি। বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ চীন সাগর এবং সুলু সাগরে কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।