দুই দেশের পণ্য চলাচল সহজ করার তাগিদ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্যের চলাচল নিরবচ্ছিন্ন করতে একটি সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ জন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথের উন্নয়ন করতে হবে। এমনকি পণ্যের চালান যাতে সহজেই সীমান্ত পার হতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এসব বাস্তবায়ন করা ‘রকেট সায়েন্স’ নয়।

গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘সমৃদ্ধির জন্য আন্তযোগাযোগ দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালুর চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়ে অনলাইন সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেন, অবকাঠামো ঘাটতির কারণে এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত সেবার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে পিছিয়ে পড়া মানুষ নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে পারছে না।
হার্টউইগ শেফার একটি উদাহরণ দেন, জার্মানির একটি পণ্যবাহী ট্রাক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্ত সহজেই পার হয়ে উৎপাদকের কাছ থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায়। অথচ বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে প্রতিদিন পাঁচ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আসে। এসব ট্রাক সীমান্ত পার হতে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেতে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ হলে পরিবহন খরচ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যাবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য–পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ কমে গেলে ভোক্তারা কম দামে পণ্য পাবে। দুই দেশের মধ্যে পণ্য চলাচলে পরিবহন খরচ অনেক বেশি। মাত্র দু-একটি স্থলবন্দরের ওপর বাণিজ্যনির্ভরশীলতা বেশি। তিনি বলেন, ভারত থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আসতে হলে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া হয়ে আসতে হয়। এ ছাড়া দলিল-দস্তাবেজের ভোগান্তি তো আছেই। দুই দেশের মধ্যে পণ্য চলাচল সহজ করতে নিরবচ্ছিন্ন ও পেশাদারি ব্যবস্থাপনায় পরিবহনব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশের মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিহাদ কবির নিজের পরিবারের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের বয়স ৮৫ বছর। তিনি তরুণ বয়সে বাংলা থেকে রাজস্থানে গিয়েছিলেন। তখনকার নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থার কথা এখনো মনে রেখেছেন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন নিরবচ্ছিন্ন করা তো রকেট সায়েন্স নয়। এ জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।

ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম মনে করেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুই দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা চালু সহজ হবে। এ জন্য মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। অথচ এক সময়ে এই অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা ছিল।’

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের নানা দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাটিয়াস হেরেরা ডাপ্পি ও বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ চার্লস কুনাকা।