দেখা দিল সূর্যমুখী ভোর

সূর্যমুখী নিয়ে মেতে উঠেছেন নীলফামারীর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এবারে এই জেলায় ১ হাজার ৯৯০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।

চাহিদা বাড়ায় নীলফামারীতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। এ বছর নীলফামারীতে ১ হাজার ৯৯০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সূর্যমুখীর খেত। সম্প্রতি জেলার গুরগুড়ি এলাকার শেখপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

সম্ভাবনাময় তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখীর চাষ ও ব্যবসা নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন নীলফামারীর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবারে সরকারি প্রণোদনায় এই জেলায় ১ হাজার ৯৯০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে খেত, যা দেখে কৃষক মুগ্ধ হন, স্বপ্ন দেখেন লাভের। পথচারীরাও দাঁড়িয়ে যান—সৌন্দর্য উপভোগ করেন, সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীরাও সূর্যমুখীবীজ কেনার আগ্রহ দেখান, মুনাফার কথা ভাবেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের মতে, বাণিজ্যিক ও ব্যবহারিক সুবিধার কারণে ব্যবসায়ী ও চাষিদের কাছে সূর্যমুখীর কদর বাড়ছে। এটি থেকে যেমন তেল ও খৈল হয়, তেমনি গাছও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ জন্য ব্যবসায়ীরা সূর্যমুখীর বীজ কিনতে ইতিমধ্যে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সূর্যমুখী ভোজ্যতেল বেশ জনপ্রিয়। এটি থেকে যে খৈল হয়, সেটি হাঁস-মুরগি-মাছ ও গরুর খাদ্য তৈরির কাঁচামাল বা উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের খৈলের দাম বেশি হওয়ায় সূর্যমুখীর খৈলের চাহিদা বাড়ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় পশুখাদ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান রুহামা অ্যাগ্রো অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মো. রাশেদ আলী শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববাজার থেকে আগে আমরা যে সয়াবিন খৈল ৩৩ টাকা কেজি দরে কিনেছি, তা এখন ৫০-৫২ টাকা; অন্যদিকে সূর্যমুখীর খৈলের দাম ২৬ টাকা কেজি। সে জন্য নীলফামারীতে সূর্যমুখীর চাষ বেড়ে যাওয়ায় আমরা এর বীজ সংগ্রহ করতে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ওই বীজ থেকে আমরা ভোজ্যতেল উৎপাদন ও খৈল দিয়ে পশুখাদ্য তৈরি করব। এতে আমরা কম দামে কিনতে পারব, কৃষকেরাও লাভবান হবেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ বছর নীলফামারীতে ১ হাজার ৯৯০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬৬ কেজি, আর প্রতি কেজি বীজের সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সে অনুযায়ী প্রায় চার কোটি টাকার সূর্যমুখী বীজ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা সদরের গুরগুড়ি শেখপাড়া গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘সরকারি প্রণোদনায় আমরা ১৭ জন কৃষক মিলে ১৭ বিঘার একটি প্লটে চাষ করেছি। এখন গাছ ও ফুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ফলন আশানুরূপ হবে। আমরা ভালো লাভের স্বপ্ন দেখছি।’

একই গ্রামের কৃষক খাদেম আলী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বীজ কেনার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন। আশা করছি, প্রথমবারের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনের বছরগুলোতে চাষ আরও বাড়াতে পারব।’

জানতে চাইলে নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ২৮ হাজার কোটি টাকার সয়াবিন তেল আমদানি হয়। তা কমাতে সরকার সূর্যমুখীর চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আর নীলফামারী অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী। রোপণের ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে ওঠে। ভবিষ্যতে আবাদের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে। ফলে সয়াবিন তেলের আমদানি কমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদদের উদ্ধৃত করে ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে ফলিক অ্যাসিডও। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে ও মিনারেল। এ ছাড়া হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সূর্যমুখী তেল নিরাপদ।’