নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খোঁজা দরকার

রপ্তানির ঝুড়ি বড় করতে পণ্যের বহুমুখীকরণ দরকার। এ জন্য সরকারের নীতি-পদক্ষেপ ও রপ্তানিকারকদের উদ্যোগী ভূমিকা দরকার।

দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)

রপ্তানি বাড়াতে তৈরি পোশাকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে নজর দিতে হবে। এ জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দিতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী খুঁজতে হবে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন নতুন বাজার।

গতকাল শনিবার ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুড়ির বহুমুখীনতা: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এমন অভিমত উঠে এসেছে। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি ছিলেন।

আইসিএবির সাবেক সভাপতি আদিব এইচ খানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু। আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু এতে স্বাগত বক্তব্য দেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২০১টি দেশে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ছয় ধরনের পণ্যই হলো ৯২ শতাংশ। এগুলো হচ্ছে ওভেন ও নিট পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাদ্য। এর মধ্যে আবার ওভেন ও নিট পোশাক মিলেই ৮৩ শতাংশ।

বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫৬ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। এ ছাড়া উত্তর আমেরিকায় ২২ শতাংশ, এশিয়ায় ১৩ শতাংশ, পূর্ব ইউরোপে ৩ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যে ২ শতাংশ এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে ১ শতাংশের কম পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ইইউর ২৭ সদস্যদেশের পাশাপাশি সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, কানাডা, তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, চিলি, বেলারুশ—এসব দেশেও শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ।

ওয়েবিনারে আরও বলা হয়, আফ্রিকার ২৯ কোটি জনগোষ্ঠীর ১৪টি দেশের একটি জোট রয়েছে সাউথ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) নামে। রপ্তানির জন্য বিপুল সম্ভাবনার এই বাজার পুরোটাই পড়ে আছে। এদিকে হালকা প্রকৌশল, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, সিরামিক, মুদ্রণ, আসবাবপত্র, মসলা, আগর, ফলের জুস, সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি খাতের পণ্য রপ্তানিতে জোর দিতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনার কারণে রপ্তানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু থেমে নেই বাংলাদেশ। তবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। দেশের রপ্তানি সম্ভাবনাময় ১৯টি পণ্যকে মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে।

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ বিষয়েও সরকার কাজ করছে।

বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘একটা ডলার অর্জন করার জন্যও আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। এ জন্য বিশ্বের ২১টি দেশে বাংলাদেশ মিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলারের রপ্তানি হারাতে পারি। পাশাপাশি নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, ‘বড় সমস্যা হলো করকাঠামো। চূড়ান্ত পণ্যে কর বেশি এখানে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে সেবা খাতের অবদান ৫২ শতাংশ, আমার মনে হয় সেই সেবা খাতের রপ্তানিকে অনেকটাই উপেক্ষা করা হচ্ছে।’ এদিকে নতুন বাজারের চেয়ে প্রতিষ্ঠিত বাজারের দিকেই রপ্তানিকারকদের ঝোঁক বেশি বলেও সমালোচনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অথচ অর্থায়নেরই বড় সংকট তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। ব্যাংকঋণ কীভাবে পাওয়া যাবে, তারও কোনো নীতিমালা নেই।

বাংলাদেশ হস্তশিল্প উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি গোলাম আহসান বলেন, সুসংবাদ হচ্ছে জুলাই-ডিসেম্বরে হস্তশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশ। অর্থবছর শেষে তা ১০০ শতাংশ হবে। আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, যদি নগদ সহায়তা এখনকার ১০ থেকে আগের ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মারুফ হোসেন যোগ্য ব্যক্তিদের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নিয়োগের পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শোয়েব হাসান বলেন, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বড় সম্ভাবনা আছে। কিন্তু পোশাক খাতে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন করা গেলেও এই খাতে তা আটকে রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, আইসিএবির সহসভাপতি মারিয়া হাওলাদার এবং লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম।