পাচার হওয়া টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা কম: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
ফাইল ছবি

দেশ থেকে একবার অর্থ বেরিয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা একপ্রকার অসম্ভব। কার্যত এই টাকা ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া নেই। ফলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত আসবে, এমন আশা করেন না পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

অর্থ ফিরিয়ে আনা কতটা কঠিন, সে প্রসঙ্গে জার্মানির ইহুদিদের উদাহরণ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। বলেন, জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইহুদিরা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করে। তখন তারা নিজেদের অর্থ ও সোনা সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত রাখে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সুইস ব্যাংকগুলো সেই অর্থ ফেরত দেয়নি। এর বহুকাল পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি লবির চাপে সুইস ব্যাংকগুলো সেই অর্থ ও সোনার খবর জানাতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ সরকারের তো সেই ক্ষমতা নেই, ফলে আমাদের পক্ষে সেই অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এম এ মান্নান বলেন, টাকা যাতে দেশ থেকে বেরোতে না পারে, সেই চেষ্টা করা উচিত। তাহলে কেন এই সুযোগ দেওয়া হলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, “চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি”। তবু আশা ছিল সরকারের, যদি তারা কিছুটা ধর্মের কথা শোনে।’

গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও র‍্যাপিড আয়োজিত এক ওয়েবিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে উপস্থাপনা দেন র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ।

কালোটাকা সাদা করা বা পাচার হওয়া টাকা ফেরত এলে তা সাধারণত আবাসন খাত ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়। কিন্তু এই প্রবণতার বিপদও আছে বলে মত দেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। বলেন, এ কারণে বাজারে কৃত্রিম বুদ্বুদ তৈরি হয়। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছিল, তার ফলে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামে। সেই বাজার কিন্তু এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

অর্থমন্ত্রী অনেক ক্ষেত্রেই অসহায় বলে মন্তব্য করেন প্রথম আলোর অনলাইন প্রধান শওকত হোসেন। তিনি বলেন, কিছু জায়গায় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে ব্যয় হ্রাস করা একেবারেই সম্ভব নয়। এসব ব্যয় করার পর বাকি যা থাকে, তা দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রাজস্ব আয় বাড়ছে না। ব্যয়ের খাত আছে, কিন্তু আয়ের খাত কম। সে জন্য তাঁর প্রস্তাব, সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিটি বা কমিশন গঠন করা হোক।

অনেকটা একই সুরে কথা বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ২৬ শতাংশের মতো। আর সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১৯ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় তা বেশি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় এই ২৬ শতাংশ পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। তবে সামগ্রিকভাবে তিনি সরকারি চাকরির বেতন বৃদ্ধির বিপক্ষে নন।

মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে তাদের সঞ্চয় কমছে, প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি না করার সমালোচনা করেন বক্তারা। আবার এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকের এফডিআরের ওপর উৎসে কর বৃদ্ধির সমালোচনা করেন তাঁরা। বলেন, এতে বয়স্ক মানুষ ও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেন র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক। এ ছাড়া খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএসের মতো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বর্তমান বছরের তুলনায় কমে যাওয়া (জিডিপির বিবেচনায়) অবাক করা বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ। তিনি আগামী অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সেখান থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী বলেন, পাচার করা অর্থ আনার সুযোগ যাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে এবং যেসব পাচারকারী এই সুযোগ নেবে না, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।