প্রস্তুত পণ্যে কম, কাঁচামালে বেশি

কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি করে এক কেজি খাওয়ার উপযোগী কাজুবাদাম তৈরি করতে ৩১ টাকা বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে।

কাজুবাদাম

প্রস্তাবিত বাজেটে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশ ও নতুন রপ্তানি খাত তৈরির কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য শুল্ক–কর কমানোর কথাও বলেছেন বাজেট বক্তব্যে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর হিসাব–নিকাশ করে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত শুল্কহারে এই খাতের বিকাশ হবে না। উল্টো যেসব কারখানা আছে, সেগুলো দেশীয় কাঁচামাল না পেলে বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হবে।

প্রস্তাবিত শুল্কহার অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোসাসহ কাঁচা কাজুবাদামের আমদানি শুল্ক–কর দিতে হবে প্রায় ১৪ টাকা। এখন কারখানায় খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার উপযোগী এক কেজি কাজুবাদাম তৈরি করতে দরকার হয় সাড়ে চার কেজি কাঁচা কাজুবাদাম। তাতে প্রতি কেজি খাওয়ার উপযোগী কাজুবাদামে শুল্ক–কর দাঁড়ায় ৬১ টাকা। আর সরাসরি খাওয়ার উপযোগী কাজুবাদাম আমদানি করতে হলে কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হবে প্রায় ৩০ টাকা। সেই হিসাবে, কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি করে এক কেজি খাওয়ার উপযোগী কাজুবাদাম তৈরি করতে ৩১ টাকা বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে।

পুরোনো শুল্কহারে বৈষম্য থাকায় কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, বাজেটে বৈষম্য রোধ করা হবে। কৃষিমন্ত্রীও বৈষম্য রোধ করতে অনেক চেষ্টা করেছেন।
শাকিল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ

বাজেট ঘোষণার দিন (গত ৯ জুন) থেকেই নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়েছে। এমন সময়ে শুল্কহার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে যখন এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন। সিটি গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, জেএমআই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাজ্জাক অ্যাগ্রো বিজনেসের মতো অনেকেই এগিয়ে এসেছে এই খাতে। পাশাপাশি আছেন পুরোনো উদ্যোক্তারাও।

হতাশ উদ্যোক্তারা

পার্বত্য এলাকায় স্থানীয়ভাবে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে এই খাতে কারখানার সূচনা হয় গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল আহমেদের হাত ধরে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো শুল্কহারে বৈষম্য থাকায় কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, বাজেটে বৈষম্য রোধ করা হবে। কৃষিমন্ত্রীও বৈষম্য রোধ করতে অনেক চেষ্টা করেছেন। প্রস্তাবিত নতুন শুল্কহারে আমরা হতাশ। এতে কারখানা চালু করা যাবে না। নতুন উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে যাবেন। কারণ, কাঁচামাল এনে এক কেজি কাজুবাদাম তৈরিতে এখন মানভেদে খরচ পড়বে ৭৭০–৮৫০ টাকা। আর আমদানি করা কাজুবাদাম ঢাকার বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০–৭৭০ টাকা।’

কাঁচা কাজুবাদাম ও প্রস্তুত কাজুবাদামে আগে শুল্কহার একই ছিল। শুধু মূসক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো ২০ শতাংশ কাস্টমস শুল্কে ছাড় পেত। এই বৈষম্যের কারণেই কাঁচা কাজুবাদাম তেমন আমদানি হচ্ছে না। দেশে কাঁচা কাজুবাদামের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলন কম হওয়ায় ছোট উদ্যোক্তারা এবার কাজুবাদাম কিনতে পারেননি। তাই অনেক কারখানা চালু হচ্ছে না। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য রোধ হবে বলে আশায় ছিলেন উদ্যোক্তারা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের আশা পূরণ হয়নি।

প্রস্তুত কাজুবাদাম আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকে মূল্য ফাঁকি দিচ্ছে আমদানিকারকেরা। ভিয়েতনামের কাজুবাদাম রপ্তানিকারকদের সংগঠন ‘ভিয়েতনাম ক্যাশো অ্যাসোসিয়েশন’ এ মাসে এক প্রকাশনায় বলেছে, বাংলাদেশে তারা গড়ে ৬ দশমিক ৮৫ ডলার দরে কাজুবাদাম রপ্তানি করেছে। অথচ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর আমদানিকারকেরা প্রতি কেজি ১ দশমিক ৮৫ ডলার দরে আমদানির তথ্য দিচ্ছেন। এই দরেই শুল্কায়ন করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।