ফেরত যাচ্ছে পদ্মা সেতুর টাকাও

প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রতিবারের মতো এবারও সরকারের উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ কমছে। বরাবরের মতো এবারও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ খরচে ব্যর্থ মন্ত্রণালয়গুলো। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে গেছে অনেক প্রকল্প। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প থেকে বরাদ্দের টাকাও ফেরত যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে সংশোধিত বাজেট অনুমোদনের কথা রয়েছে।

উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকা খরচ করতে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হয়। যেটা সরকারি টাকায় করতে হয় না। ফলে প্রতিবছরই বিদেশি ঋণের টাকা ফেরত যায়।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার কমে দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকায়। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এডিপি থেকে ৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে। তথ্য বলছে, অন্যবারের মতো এ বছরও রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা কমছে না। কমছে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সব সময় রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ খরচে খুব একটা আগ্রহী থাকে না। ফলে প্রতিবছরই বিদেশি ঋণ ফেরত দেয় মন্ত্রণালয়গুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকা খরচ করতে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হয়। যেটা সরকারি টাকায় করতে হয় না। ফলে প্রতিবছরই বিদেশি ঋণের টাকা ফেরত যায়।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার আশা করেছিল সরকার। সেই টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে মন্ত্রণালয়গুলো এখন বলছে, এই অর্থ খরচ করা যাবে না। তাই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে ৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে। তাতে সংশোধিত এডিপিতে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের বরাদ্দ কমে ৬২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে। আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা মূল বাজেটে যা ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, তা-ই থাকছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. ছায়েদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধিত এডিপির আকার চূড়ান্ত হয়েছে। তাতে এডিপির আকার কিছুটা কমছে। সেটি উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে। চলতি মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে জানান তিনি।

তথ্য বলছে, সংশোধিত এডিপিতে পদ্মা সেতুর বরাদ্দ কমছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সেটি সংশোধন করে ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সেতু বিভাগ এই টাকা চেয়েছে। ফলে সংশোধিত এডিপিতে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমছে ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। করোনার কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্প প্রথম দিকে কাজের গতি কমে গেলেও এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আগামী বছর জুনে স্বপ্নের সেতু চালু করার কথা। এ বছর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সেটি সংশোধন করে এখন ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছর এই প্রকল্প থেকে ফেরত যাচ্ছে ১২৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সংশোধিত এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে বরাদ্দ বাড়ছে। জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তা ছাড়া করোনায় কাজ হারিয়ে যাঁরা গ্রামে চলে গেছেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সবশেষ তথ্য বলছে, করোনার কারণে এডিপি বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে এবার সাত মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।