বকুলদের যেভাবে বেলা কেটে যায়

বকুল রবিদাস

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বকুল বিস্কুট খেয়েছেন। তাঁর মা, স্ত্রী ও ভাগনেও বিস্কুট খেয়েই আছেন। আগের দিন সকালে খেয়েছিলেন ভাত। আলুভর্তা আর ডিম দিয়ে। সেই খাবার দিয়েই চারজনের সারা দিন গেছে। গতকাল দুপুরে ভাত রান্নার কথা ছিল কিন্তু তরকারির ব্যবস্থা ছিল না। বাড়ির পাশে অন্যের এক পুকুরে বিষ ছিটানো হয়েছিল পুকুর পরিষ্কার করতে। তাতে কিছু মাছ মরে ভেসে উঠেছিল। বকুলের ভাতিজা সেখান থেকে একটা মাছ তুলে এনেছিল।

বকুল ফুটপাতের ধারে ছোট্ট একটা দোকানে জুতা সেলাই করেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারে বিধিনিষেধের কারণে দোকান খুলতে না পারায় তাঁদের খাওয়াদাওয়ার এই হাল হয়েছে। এক দিন ভাত জুটে তো তরকারি নেই। আরেক দিন শুরু হয় বিস্কুট খেয়ে।

বকুলের পুরো নাম বকুল রবিদাস। বয়স ২৮ বছর। থাকেন রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর বাকির মোড় এলাকার বস্তিতে। রাজশাহী নগরীর অলকার মোড়ে ফুটপাতের ধারে ছোট্ট দোকানে বসে জুতা সেলাই করেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মন্টু রবিদাস অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন থেকে বকুল বাবার দোকানে বসা শুরু করেন। ছেঁড়া জুতা সেলাই করেন। বাবার কাছ থেকে জুতা সেলাইয়ের কাজটুকু পেয়েছিলেন। এরপর নিজের মেধা খাটিয়ে স্যান্ডেল তৈরি শুরু করেছিলেন। জুতা সেলাই ও পালিশের পাশাপাশি দিনে দু-চার জোড়া স্যান্ডেল বিক্রি করে গত ১৫ বছর পার করে দেন বকুল।

আর্থিক অসংগতির কারণে বিয়ে করেননি। ছিলেন মাকে নিয়ে। কিন্তু মা তা মানবেন কেন? অনেকটা জোর করেই গত ফেব্রুয়ারিতে বকুলের বিয়ে দেন মা। তাতে বকুলের জমানো টাকা খরচ হয়ে যায়। বোনের একটা ছেলেও তাঁদের সঙ্গে থাকে। সব মিলিয়ে চারজনের সংসার।

গত বছর সাধারণ ছুটির সময়ও বকুলকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। গত বছর মহাজনের টাকা শোধ করতে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়। সেই ঋণের কিস্তি এখনো টানতে হচ্ছে, মাসে চার হাজার টাকা। প্রতিদিন সকালে বকুল এসে দোকানের চারপাশে ঘোরাফেরা করেন। দোকান খোলার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ চলে আসে। দোকান খুলতে পারেন না। তবু বকুল না এসে থাকতে পারেন না। পরিচিত কেউ এসে যদি বলে, ‘বকুল, এক জোড়া স্যান্ডেল দাও।’ সেই আশায় প্রতিদিন ছুটে আসেন। গতকালও বকুল এসেছিলেন। আলাপকালে জানতে চাই, সকালে কী খেয়েছেন? বকুল বলেন, বাড়ির সবাই বিস্কুট খেয়েছেন। দুপুরে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখনো সকালের সেই বিস্কুট-পানি খাওয়া বকুল। তিনটা বাজে তখন। বকুল বলেন, ভাতিজা বাড়ির পাশের পুকুরের মাছটা পাওয়ায় দুপুরে ভাত রান্নার ব্যবস্থা হয়েছে।