বগুড়া থেকে রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য

  • বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও বগুড়া থেকে রপ্তানি তালিকায় নিত্যনতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ সংযোজন নারীর কৃত্রিম চুল।

  • গত তিন মাসে রপ্তানি হয়েছে ৮২ কোটি টাকার পণ্য।

  • ২০২০ সালে ৪৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি।

  • ২০১৯ সালে রপ্তানি হয়েছে ৬১৪ কোটি টাকার পণ্য।

বগুড়া থেকে রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হয়েছে নারীর কৃত্রিম চুল।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বগুড়া থেকে ৯৭ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। এই আয় দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। সর্বশেষ মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলীয় এই জেলা থেকে বর্তমানে প্রতিবেশী ভারত–শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ; অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়েসহ ইউরোপের অন্তত ১৮টি দেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

প্রচলিত রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পাটের সুতা, বস্তাসহ পাটজাত পণ্যসামগ্রী, রাইস ব্র্যান অয়েল বা চালের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল, সৌদি রাজকীয় পোশাক, গার্মেন্টস পণ্য বা তৈরি পোশাক, জালি টুপি, হস্তশিল্প পণ্য, ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফরমার, সেচপাম্প, ধানমাড়াই যন্ত্র, টিউবওয়েল, নকশিকাঁথা, আলু, মরিচ, ভুট্টা, দেশি পাবদা ও শিং মাছ ইত্যাদি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতিতেও রপ্তানি তালিকায় নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে। যেমন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রপ্তানি হচ্ছে নারীর ব্যবহার্য কৃত্রিম চুল (সিনথেটিক হেয়ার গুডস)। রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৬১ হাজার ডলার। এ ছাড়া নতুন পণ্য হিসেবে পুঁইশাক, করলা, পালংশাক, টমেটো ও শসার বীজ রপ্তানি করে আয় হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ডলার। এআর এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় সবজি বীজ রপ্তানি শুরু হয়েছে। এখন ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।

বগুড়া চেম্বারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মানে ২০২০ সালে এখান থেকে মোট ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। এর আগের বছর ২০১৯ সালে বগুড়া থেকে পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ডলার ৬১৪ কোটি টাকার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে রপ্তানি কমেছে ১৬৮ কোটি টাকা। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে রপ্তানি কমেছে। স্থানীয় মা ট্রেডার্সের পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, পাটের তৈরি বস্তার ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শোভা অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, মজুমদার প্রোডাক্টস, তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েস্টার্ন অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট, আলাল ফুড প্রোডাক্ট, কিবরিয়া ট্রেডার্স, আর এন্টারপ্রাইজ, হাসান জুট মিলস, বগুড়া জুট মিলস, মা ট্রেডার্স, রনি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, তূর্য এন্টারপ্রাইজ, রায়হান ট্রেডার্স, মাশওয়া এন্টারপ্রাইজ, হাইজ্যান্ডি হেয়ার প্রোডাক্ট কোম্পানি।

মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে জানান, ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা ভারতে রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল রপ্তানি করছেন। এখন বিশ্ববাজারেও এই তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।

বগুড়া থেকে বিভিন্ন সবজির রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। এ সম্পর্কে মাশওয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আরিফ আজাদ বলেন, বিদেশের বাজারে বগুড়ার আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বগুড়ার নারীদের তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প পণ্য অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়েসহ ইউরোপের ১৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বগুড়ায় তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে।

জালি টুপি রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বগুড়া থেকে শিং,পাবদাসহ দেশি মাছ ভারতসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

জানতে চাইলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মাফুজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর চালু হলে বিদেশি ব্যবসায়ীরা বগুড়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন। তখন বগুড়ায় রপ্তানি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।