বদলে যাচ্ছে সাবরাং, বাড়ছে বিনিয়োগ

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)

এক দশক আগে কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাংয়ে একটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল করার দায়িত্ব পেয়েছিল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা পর্যটন করপোরেশন। কিন্তু ঢিমেতালে কাজ করার কারণে তারা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে পারেনি। শুধু জমির ধরন বা প্রকৃতি নির্ধারণ, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন ও মাপজোক করতে করতেই তাদের পাঁচ বছর কেটে যায়। পরে ২০১৪ সালে অঞ্চলটি উন্নয়নের দায়িত্ব বদল হয়। পর্যটন করপোরেশন থেকে দায়িত্বটি পায় আরেক সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

বেজা এখন সাবরাং পর্যটন অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের খুব আকৃষ্ট করেছে। আর বেজার কার্যক্রম দেখে এখন সাবরাংয়ে পর্যটনসুবিধা দিতে পর্যটন করপোরেশন পাঁচ একর জমি কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফের যেখানে গিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি শেষ হয়েছে, তার পাশেই ১ হাজার ৪১ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। এর এক দিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, অন্য দিকটায় সারি সারি পাহাড়। দুইয়ে মিলে মনোমুগ্ধকর এক প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠছে পরিকল্পিত এক পর্যটনকেন্দ্র।

‘সাবরাং পর্যটন অঞ্চল তৈরির জন্য আমরা পাঁচ বছর কাজ করেছিলাম। পরে সেটির দায়িত্ব সরকার বেজাকে দিয়েছে। এখন আমরা সেখানে পাঁচ একর জমি চেয়েছি। সেখানে পর্যটনসুবিধা দিতে আমাদেরও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।’
জাকির হোসেন সিকদার , পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ টেকনাফে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দেয়। শুরুতে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় পর্যটন করপোরেশনকে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এ কারণে ২০১৪ সালে বেজাকে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

জানতে চাইলে পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবরাং পর্যটন অঞ্চল তৈরির জন্য আমরা পাঁচ বছর কাজ করেছিলাম। পরে সেটির দায়িত্ব সরকার বেজাকে দিয়েছে। এখন আমরা সেখানে পাঁচ একর জমি চেয়েছি। সেখানে পর্যটনসুবিধা দিতে আমাদেরও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।’

বেজার কর্মযজ্ঞ

সম্প্রতি সরেজমিনে সাবরাংয়ে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটন অঞ্চলটিকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ ফুট উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রশাসনিক ভবন। চলছে ভূমি উন্নয়ন ও সীমানাদেয়াল নির্মাণের কাজ।

সাবরাং পর্যটন অঞ্চলের কারণে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এ সুযোগ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
আব্দুল হাই, স্থানীয় বাসিন্দা

আলাপকালে স্থানীয় লোকজন জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের পর থেকেই মূলত টেকনাফে জমির দাম বাড়তে থাকে। পর্যটন এলাকার কাজ শুরুর পর জমির দাম আরও কয়েক গুণ বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলের কারণে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এ সুযোগ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

সাত কোম্পানির সঙ্গে লিজ চুক্তি

বেজার তথ্য অনুযায়ী, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী সাতটি কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ও সানসেট বে-এই তিন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে সেখানে হোটেল তৈরির কাজ শুরু করেছে। বাকি চার কোম্পানি হলো হোয়াইট অর্চিড গেস্টহাউস, মুনলাইট ওভারসিস, লিজার্ড স্পোর্টস, ইন্টার এশিয়া গ্রুপ।

প্রকল্প এলাকায় গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ও সানসেট বের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইশতিয়াক আহমেদ পাটোয়ারি বলেন, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে তাঁরা প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি পাঁচ তারকা হোটেল তৈরি করছেন।

এ পর্যটন অঞ্চলের তিন একর জমিতে খেলাধুলাসংক্রান্ত পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করতে যাচ্ছে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার। কোম্পানিটির এমডি সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা এ পর্যটন এলাকায় ৫০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবেন। পর্যটকদের জন্য স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিং, বিচ ভলিবল ইত্যাদি সুবিধা দেবেন তাঁরা।

বেজার কর্মকর্তারা জানান, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে আরও চার কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব বেজার পর্ষদ সভায় অনুমোদন পেয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো ইফাদ অটোস, ইফাদ মোটরস, দ্য কক্স টুডে ও সুইট ড্রিম ম্যানেজমেন্ট। এ ছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরাসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। বসুন্ধরা সেখানে ১০০ একর জমি চেয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বেজার হাত ধরে সাবরাংয়ে পর্যটকবান্ধব একটি পর্যটন অঞ্চল গড়ে উঠবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে সেখানে প্রতিদিন ৪০ হাজার পর্যটক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর সরাসরি কর্মসংস্থান হবে ছয় হাজার মানুষের।