বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান

ঢাকায় গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয় ডি-৮ বিজনেস ফোরামের অধিবেশন।

আন্তর্জাতিক জোট ডেভেলপমেন্ট এইটের (ডি-৮) সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু এই সুযোগ তেমন কাজে লাগছে না। কোভিড-১৯ যখন মহাদুর্যোগ নিয়ে এসেছে, তখন অর্থনীতির ওপর আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ডি-৮-এর সদস্যদেশগুলো মিলেমিশে কাজ করতে পারে।

ঢাকায় গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত ডি-৮ বিজনেস ফোরামের কর্ম অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডি-৮ সিসিআই) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গতকাল থেকে দশম ডি-৮ সম্মেলন ২০২১ শুরু হয় ঢাকায়। তারই একটি সহযোগী অনুষ্ঠান হচ্ছে ডি-৮ বিজনেস ফোরাম। ঢাকায় এর আগে একই ধরনের সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।

গতকালের কর্ম অধিবেশনে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম স্বাগত বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ব্যবসা, যোগাযোগ ও সহযোগিতা—এসব কারণে ডি-৮-এর সদস্যদের মধ্যে জোরালো বন্ধন থাকা চাই। কোভিড-১৯-এর এই অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে তা আরও বেশি করে দরকার। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদস্যদেশগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য বাড়াতে ডি-৮ সিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন আব্দুল মোমেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্লক চেইন, উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এসবের দিন সামনে। একে অপরের সঙ্গে এগুলোর বিনিময় করে ডি-৮-এর সদস্যদের এগোতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বেশি বেশি বাণিজ্য সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী রুশার পেকান বলেন, ডি-৮ হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অমিত জোট। এর প্রতিটা অর্থনৈতিক সুযোগই তৈরি করতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাইস মিনিস্টার (ট্রেড) জেরি সামবুয়াগা বলেন, বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দরকার কৌশলগত অংশীদারি। আর এই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির পারস্পরিক সহযোগিতা তো লাগবেই।

ডি-৮-এর সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত দাতো কো জাফারি কো শাহারি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডি-৮-এর সদস্যদেশগুলোর সহযোগিতার প্রতিজ্ঞা মহামারি কোভিডের কারণে সৃষ্ট সংকটগুলো মোকাবিলা করতে পারবে।’

মূল কর্ম অধিবেশনের পর তিনটি আলাদা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। এগুলো হচ্ছে ডি-৮-এর সদস্যদেশগুলোর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনবিষয়ক সংযোগ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুবসমাজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভূমিকা এবং সমুদ্র অর্থনীতি। প্রথমটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সিইও মোহাম্মদ মাহফুজুল হক এবং শেষের দুটি অধিবেশন সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ,মিসর, ইরান ও নাইজেরিয়া—এই আট দেশের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোট হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট এইট (ডি-৮)। ১৯৯৭ সালের জুনে ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে এই ডি-৮ যাত্রা শুরু করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা, পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করাই ছিল এ সংস্থা গঠনের উদ্দেশ্য।