বাজারে চড়া পণ্যমূল্য মন্ত্রীর চোখে ‘সহনীয়’

বাজারে যা পরিস্থিতি

  • ভোজ্যতেলের দামে রেকর্ড, নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই।

  • চিনি এবং তরল ও গুঁড়া দুধের দাম বাড়তি।

  • টিসিবি বাড়িয়েছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম।

  • আমদানির সুযোগের পরও কমেনি চালের দাম।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

চাল, ভোজ্যতেল ও চিনির চড়া দামে সীমিত আয়ের মানুষ যখন অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে, তখন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করলেন, মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।

জাতীয় সংসদে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, সম্প্রতি হঠাৎ দেশে চাল, ভোজ্যতেল, আটা ও শুকনো মরিচের দাম বেড়ে গিয়েছিল। তবে এসব নিত্যপণ্যের মূল্য আগের মতো স্বাভাবিক, সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। সংরক্ষিত আসনের সদস্য আদিবা আনজুমের আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি করার প্রবণতা দেখা যায়। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদরের তালিকা বলছে, এক মাসে বাজারে চালের দাম কমেনি বললেই চলে। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। আটার দাম কমেনি, বরং সামান্য বেড়েছে। বাড়তি ময়দার দামও। কমেছে শুধু শুকনা মরিচের দাম।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করলেন, মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।

মন্ত্রী যেসব পণ্যের কথা উল্লেখ করেননি, তার মধ্যে চিনির দাম বেড়েছে। তরল ও গুঁড়া দুধের দামও বাড়তি। মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বেড়েছে গরুর মাংসের দামও।

বাণিজ্যমন্ত্রী যেদিন নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হয়ে এসেছে বলে দাবি করেন, সেদিনই মন্ত্রণালয়েরই অধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটি চিনির দাম বাড়িয়েছে কেজিতে ৫ টাকা। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেল ও চিনির কর কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছিল। যদিও কর কমেনি। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-চিনির দাম যত বাড়ছে, সরকারের আয়ও তত বাড়ছে।

এবার দেখা যাক, কোনো পণ্যের দাম কতটা বাড়তি। দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে বাড়তে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১৫ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দর অনুযায়ী সয়াবিন তেলের এক লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৯ টাকা, যা আগের চেয়ে ৪ টাকা বেশি।

বাজারে এখনো চালের দাম চড়া। আমদানির অনুমতির পরও দাম কমেনি। সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি বিআর-২৮ জাতের চালও কিনতে হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা কেজিতে। মোটা চালের দর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ।

টিসিবির হিসাবে, বাজারে এক মাস আগের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম ২২ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৬৬ শতাংশ বেশি। সপ্তাহ দুয়েক আগে এ দর আরও বেশি ছিল। নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমতির দিকে। পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি।

পবিত্র শবে বরাতের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে ১৬০ টাকায় উঠেছিল। সোনালিকা জাতের মুরগির কেজি ওঠে ৩৮০ টাকায়। অবশ্য কয়েক দিনে তা কমে ৩২০ টাকায় নেমেছে। বাড়ছে তরল ও গুঁড়া দুধের দাম। মিল্ক ভিটা প্রতি লিটার তরল দুধের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৯০ টাকায়।

সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর তাঁর প্রতিষ্ঠান বেতন এক টাকাও বাড়ায়নি। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘চালের যে বস্তা (৫০ কেজি) সাধারণত আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কিনতাম, তা এখন ৩ হাজার ২০০ টাকা। সবকিছুর দামই বেশি। নতুন করে বাসভাড়াও বেড়েছে।’