বাজেটে কোভিড পরিস্থিতির স্বীকৃতি নেই

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়নে বাস্তবতা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের হিসাবের মধ্যেও মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। কোভিডের বাস্তবতায় এটা কীভাবে সম্ভব, তার রূপরেখা বাজেটে নেই।

আজ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিম রায়হান বলেন, বাজেটে বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন থাকা উচিত। সমস্যা খাটো করা হলে সমাধানও যথাযথ হবে না। দারিদ্র্য, শ্রমবাজার, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার—এসব বিষয়ে কোভিডের বাস্তবতা অস্বীকার করা হয়েছে এবারের বাজেটে। তিনি মনে করেন, নীতিপ্রণেতারা আত্মতুষ্টিতে থাকতে চান। এ সময় তথ্য-উপাত্ত যখন খুব জরুরি, তখন সরকারি সংস্থাগুলো অতটা সক্রিয় নয়।

মাঠবাস্তবতা নীতিপ্রণেতাদের কাছে পৌঁছেছে বলে মনে করেন না সেলিম রায়হান। বিশেষ করে দারিদ্র্যের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। সানেম, বিআইজিডি, পিপিআরসি সবার জরিপেই দেখা গেছে, এ সময় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। কিন্তু তাদের কথা বাজেটে উঠে আসেনি। এমনকি এই পরিস্থিতিরি স্বীকৃতিও নেই। এটা নীতি প্রণয়নের জন্য ভালো নয় বলেই মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে বাজেটে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক আছে বলে মন্তব্য করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক। কৃষি খাত বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় কর ছাড় দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ইতিবাচক হলেও নিম্ন আয়ের মানুষ তার কতটা সুবিধা পাবে, সেটা পরিষ্কার নয় বলে মনে করেন তিনি। ব্যবসাবান্ধব বাজেটের কথা বললেন অর্থমন্ত্রী, কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সুবিধা পাবে, তা–ও স্পষ্ট নয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সুবিধা পাবে, তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে বাজেটে যে বড় ধরনের সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হলো না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন সায়েমা হক।

সায়েমা হকের মত, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি রোডম্যাপ থাকা উচিত। তবে এই বরাদ্দ বৃদ্ধি উন্নয়নের অভিযাত্রার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আর এবার বাজেটে যে বড় ধরনের সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হলো না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন সায়েমা হক।

এদিকে চাহিদা না বাড়লে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কতটা এবং ব্যবসাবান্ধব বাজেট মানুষের কতটা কাজে আসবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম রায়হান বলেন, ‘সরবরাহের দিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে, কিন্তু চাহিদার দিকেও তা থাকা দরকার। উন্নত দেশের মতো সক্ষমতা আমাদের নেই, অত প্রণোদনা আমরা দিতে পারব না, কিন্তু এই পরিস্থিতির স্বীকৃতি থাকা দরকার। তা না হলে পুনরুদ্ধার শ্লথ হয়ে যাবে। আবার সব ব্যবসাও সমানভাবে প্রণোদনা পাচ্ছে না।’

অর্থনীতিবিদেরা সাধারণত কখনো একমত হন না। তবে এবার সব অর্থনীতিবিদই একমত, বাজেট ঘাটতি বাড়ানো উচিত। নতুন বাস্তবতায় এই ঐকমত্য গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন সেলিম রায়হান।