‘বাড়ির বউয়েরা জিনিসপত্র আগে কিনে রাখতে বলেন’

মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় বেশি করে নিত্যপণ্য না কিনতে (প্যানিক বায়িং) ক্রেতাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাড়ির বউয়েরা জিনিসপত্র আগে কিনে রাখতে বলেন। আমার বউও বলেন এমন কথা।’

আজ রোববার সচিবালয়ে সফররত ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুপ ভাধোয়ান ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে না, তার আগেই কৌশলে বাড়িয়ে নেন ব্যবসায়ীরা—বাণিজ্যমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করলে তিনি তা অস্বীকার করেননি। পাশাপাশি বলেন, প্যানিক বায়িংও দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে এবার ব্যবসায়ীদের তেমন কৌশল অবলম্বন করতে দেবেন না বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ পণ্য সরবরাহ করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
‘বাড়ির বউয়েরা জিনিসপত্র আগে কিনে রাখতে বলেন। আমার বউও বলেন এমন কথা।’
টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যক্ষেত্রে নতুন দ্বার খুলে যাওয়ার প্রত্যাশা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। রেলপথ চালুর ফলে উভয় দেশের বাণিজ্য সহজ হয়েছে এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে চলমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আশাবাদী তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে উভয় দেশের বাণিজ্যক্ষেত্রে এমন কিছু করতে, যা উভয় দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
চালু হওয়া সীমান্ত হাটগুলো উভয় দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে আরও কয়েকটি সীমান্ত হাটের উদ্বোধন হবে। আর যেসব পণ্যের ওপর অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা আছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান করা হবে। বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মোটরযান নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ করতে ভারত আগ্রহী বলেও জানান তিনি।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর স্বল্প সুদের ঋণসুবিধা এবং শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার যে থাকবে না, সে বিষয়ে প্রস্তুতি কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আরও আট থেকে নয় বছর সময় পাচ্ছি আমরা। এটা ঠিক, বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় পড়ে যাব।’

তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাণিজ্যসুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গেও সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিএ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাণিজ্যসুবিধা বৃদ্ধির জন্য চলছে।

আরও পড়ুন

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে প্রতিবছরই সংকট তৈরি হয় কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘প্রত্যেক দেশ তার জনগণের দিকটি আগে বিবেচনা করে। প্রথমবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয়বার সংকট অতটা হতে দেওয়া হয়নি। এটা ঠিক যে পেঁয়াজে ভারতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না।’

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উভয় দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভা কাল সোমবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই এ বৈঠকের কারণ। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকছেন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পসচিব অনুপ ভাধোয়ান।

বৈঠকে ২০২০ সালের ১৫-১৬ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত আগের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। বিরাজমান ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাণিজ্যবাধা দূরীকরণ, কিছু বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ভারতের আরোপ করা অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্দরসুবিধা সম্প্রসারণ, আঞ্চলিক ফোরামগুলোকে অধিকতর কার্যকর করা ইত্যাদি বিষয় থাকবে আলোচ্যসূচিতে।