বিধিনিষেধ দীর্ঘায়িত হলে পরিবারে বিপর্যয় নামবে

মো. নাসির উদ্দিন

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নামার যে কয়েকটা পথ আছে, তার মধ্যে কলাতলী পয়েন্ট অন্যতম। এ পয়েন্ট দিয়ে সৈকতে নামার মুখেই ‘কলাতলী বিচ মার্কেট’। সব মিলিয়ে দোকান আছে ১৫টি। সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেই পণ্য বিক্রি করেন এসব দোকানি। তাঁদেরই একজন মো. নাসির উদ্দিন। মার্কেটের নাসির স্টোরের মালিক তিনি। পর্যটকবিহীন সৈকতে তিনি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে দোকান পাহারা দিচ্ছিলেন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে।

নাসির উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ঝিরঝিরি এলাকায়। আলাপকালে নাসির জানান, ১৫ বছর আগে পর্যটকদের কাছে শামুক-ঝিনুকের তৈরি নানা পণ্য বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার আয় দিয়ে ভালোই চলছিল পাঁচজনের সংসার। পাঁচ বছর আগে এক লাখ টাকার সেলামিতে কলাতলী বিচ মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নেন। আর ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিন লাখ টাকা। কিন্তু গত বছরের মার্চে করোনার কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় টানা পাঁচ মাস বন্ধ ছিল দোকান। তাতে দোকানে থাকা বহু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।

গত ডিসেম্বরে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এলে ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন করে আবার ব্যবসা শুরু করেন নাসির। গত ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক আসা শুরু হলে ব্যবসাও চাঙা হয়েছিল। দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হতো। তাতে নাসিরের দুশ্চিন্তা কিছুটা কাটতে শুরু করে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কপাল পুড়ে নাসিরেরও। ১ এপ্রিল স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতে পর্যটক নামা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমনও বন্ধ হয়ে যায়।

নাসির উদ্দিন বলেন, আগে দোকান থেকে যে আয় হতো, তা দিয়ে দুজন কর্মচারীর বেতন দিয়েও সংসারের খরচ চলে যেত। এখন পর্যটক নেই, বেচাবিক্রিও বন্ধ। ফলে কর্মচারীর বেতন দিতে ও সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী ও এক ছেলে তাঁর। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সীমিত আকারে হলেও পর্যটক আসার সুযোগ দেওয়া না হলে পথে বসবে আমার মতো শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যদি এবারের বিধিনিষেধ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে আমার মতো ব্যবসায়ীর পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসবে। গত বছর করোনার কারণে টানা পাঁচ মাস দোকানপাট বন্ধ থাকলেও কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। এর মধ্যে এবারও ঈদ সামনে রেখে ব্যবসা না থাকলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, ভাবতেও পারছি না।’