বিধিনিষেধে পাইকারি বাজারে দাম পড়তি

ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববাজারে দামে অস্থিরতা থাকলেও এবার রোজার চাহিদার তুলনায় বাড়তি পণ্যই এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সরবরাহ নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তা নেই। শবে বরাতের পর পাইকারি বাজারে বিক্রির চাপে দাম বাড়ার যে শঙ্কা ছিল, সেটিও সাময়িক কেটেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে চাহিদা অনেক কমে গেছে।

গত শনি ও রোববার দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমেছে রোজার পণ্যের দাম। পণ্যভেদে কেজিপ্রতি এক থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে তেল, চিনি, ছোলা ও মটর ডালের দাম। গতকাল সোমবার চিনির দাম সামান্য বাড়লেও গত সপ্তাহের তুলনায় কম। তবে হঠাৎ দরপতনের প্রভাব এখনো খুচরায় পড়েনি। পাইকারি বাজারের প্রভাব খুচরায় পড়তে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় এমনিতেই খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা কমে গিয়েছিল। এর মধ্যে শনিবার সকালে বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণায় দাম আরও কমে যায়। দাম আরও কমতে পারে, এ শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা হাতে থাকা পণ্য ধরে না রেখে ছেড়ে দিচ্ছেন। তাতে পাইকারি বাজারে কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। ফলে দামও পড়তি।

নিত্যপণ্যের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগে খাতুনগঞ্জে পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে যায়। এবার সেটি হয়নি। এর আগে পাইকারি বাজারে কখনো এমন অবস্থা দেখা যায়নি। বেশির ভাগ পণ্যের দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে যেমন কম, তেমনি লেনদেনও কম হচ্ছে।

ছোলা, মটরের দাম কমছে

পাইকারি বাজারে এখন যে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকায়, তা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৬০-৬২ টাকা। মানভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে ছোলার দাম। পাশাপাশি ছোলার আমদানিও চাহিদার চেয়ে বেশি। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা ছোলা এনেছেন ১ লাখ ৭৪ হাজার টন। মটর ডালের দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে কমে এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩৮ টাকায়। দেশে এ দুই ধরনের ডালের আমদানিও ভালো। গেল ৩ মাসে ৩ লাখ ৪২ হাজার টন ছোলা ও মটর ডাল এনেছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দেব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও দেশে আমদানি বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। তাই বাজারে ডালের দাম কম।

রেকর্ড আমদানি, সস্তায় খেজুর

বিশ্ববাজারে সব পণ্যের দাম বাড়লেও এবার ব্যতিক্রম খেজুর। করোনার কারণে হজ ও ওমরাহ সীমিত আকারে পালন হওয়ায় সৌদি আরবে খেজুর বেচাকেনা কম ছিল। তাই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে খেজুরের দাম পড়ে যায়।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, এবার খেজুর আমদানিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এত দিন পর্যন্ত খেজুর আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সে বছর সাড়ে ৬৩ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছিল। এবার অর্থবছরের ৯ মাসেই আমদানি হয়েছে ৮৪ হাজার টন। এর মধ্যে গত ৩ মাসে আমদানি হয়েছে ৪৫ হাজার টন।

পাইকারি বাজারে আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক বছর আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি চলে ইরাকের জাহিদি খেজুর। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়।

তেল-চিনিতে স্বস্তি-অস্বস্তি

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে চিনির দাম গত মাসেই সাড়ে ৫ শতাংশ কমেছে। আবার গত মাসে সয়াবিন তেলের গড় দাম বেড়েছে টনপ্রতি ৬৩ ডলার বা পৌনে ৪ শতাংশ। গড় দাম বাড়লেও গত মাসের শেষ দিক থেকে সয়াবিন তেলের দাম কমতির দিকে।

পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমছে। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন ১২৩ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২১ টাকায়। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও বোতলজাত সয়াবিন যাঁরা কেনেন, তাঁদের জন্য সুখবর নেই। কারণ, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমার সঙ্গে দেশেও চিনির দাম কমেছে। ৬৪ টাকার চিনি গতকাল রোববার খাতুনগঞ্জে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, চলাচলে সরকারি বিধিনিষেধের সময় স্বাভাবিকভাবে রোজার পণ্যের চাহিদা কম থাকবে। এ বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়লে ব্যবসায়ীরাও পণ্য ছেড়ে দিতে চাইবেন। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে এবার বাজারে খুব বেশি নজরদারির দরকার না-ও হতে পারে।