বৃহস্পতিবার থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার দাবি

লকডাউনে ঢাকার নিউমার্কেট
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান সর্বাত্মক লকডাউন শেষে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা। তাঁরা বলেছেন, ৫৩ লাখের বেশি দোকানদার ও প্রায় ২ কোটি ১৪ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন ও জীবিকার স্বার্থে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রয়োজন।

রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান আট দিনের লকডাউন শেষে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ার দাবি জানায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির মহাসচিব মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে আট দিনের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমরা ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছিলাম। তবে আমরা দেখলাম লকডাউনে তৈরি পোশাকসহ সমস্ত শিল্পকারখানা চালুর রাখার সিদ্ধান্ত দিল সরকার। ব্যাংক, বিমা ও শেয়ারবাজার খুলে দেওয়া হলো। সড়কে চলাচলের জন্য পুলিশ লাখ লাখ মুভমেন্ট পাস ইস্যু করল। খোলা থাকল কাঁচাবাজার। নির্মাণকাজও চলছে। প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটও চালু হলো। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করলাম, শুধু দোকানপাট ও বিপণিবিতানের সঙ্গে আন্তজেলা পরিবহন বন্ধ রাখা হলো।’

১৫ জন বা তার কম কর্মী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে, এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬। সেই হিসাবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৪ জন কর্মী রয়েছেন, এমনটি ধরলে দোকান কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ১৪ লাখ।
করোনার সংক্রমন রোধে প্রথম দফায় সাত দিনের বিধিনিষেধের সময় দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ।
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

হেলাল উদ্দিন দাবি করে বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচাবাজার, জনসমাবেশ, পর্যটন এলাকা ও ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে করোনা বেশি ছড়ায়। কোথাও বলা হয়নি, দোকানপাট ও বিপণিবিতান থেকে এই মহামারি ছড়ায়। তাহলে কোন অপরাধে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়লা বৈশাখ ও ঈদের আগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তাঁদের পুঁজি বিনষ্ট করা হলো। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোকসানে দিশেহারা হয়ে আত্মাহুতির মতো পথ বেছে নেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে দোকান মালিক সমিতি জানায়, ১৫ জন বা তার কম কর্মী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে, এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬। সেই হিসাবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৪ জন কর্মী রয়েছেন, এমনটি ধরলে দোকান কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ১৪ লাখ। মাসে ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা বেতন ধরলেও ঈদের আগে একজন কর্মচারীকে দুই মাসের (এপ্রিল ও মে) বেতন ও বোনাস বাবদ ৪৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এতে মোট ৯৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বিধিনিষেধ ও চলমান লকডাউনে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৮ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ হিসেবে দেওয়ার দাবি জানান দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং বেতন ও বোনাসের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজর ঋণ না দিলে কর্মচারী ও শ্রমিকেরা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বেন। করোনার মধ্যে জীবন-জীবিকার স্বার্থে সারা বিশ্ব লকডাউনের পরিবর্তে গণহারে টিকা দেওয়া, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
হেলাল উদ্দিন, সভাপতি, দোকান মালিক সমিতি

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং বেতন ও বোনাসের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজর ঋণ না দিলে কর্মচারী ও শ্রমিকেরা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বেন। করোনার মধ্যে জীবন-জীবিকার স্বার্থে সারা বিশ্ব লকডাউনের পরিবর্তে গণহারে টিকা দেওয়া, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষা করতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান ও মহাসচিব হাফেজ হারুন, ঢাকা উত্তর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুর ইসলাম, পলওয়েল সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনি তালুকদার এবং অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক থাকায় চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কাল সোমবার সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই লকডাউনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক থাকায় চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কাল সোমবার সভা ডাকা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনো বেশি। তাই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে ১৯ এপ্রিলের সভায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিকল্পনা হলো, চলমান লকডাউন আরও সাত দিন বাড়িয়ে এরপর আবার শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে চলা। এভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত চলা। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া। লকডাউন সাত দিন যদি বাড়ে, তাহলে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত হয়। পরদিন ২৯ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার। এর পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এসব বিষয় মাথায় রেখেই লকডাউনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় টানা দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে।