ব্যবসা ধরতে ভ্রমণে কিস্তি সুবিধা

১৯ আগস্ট থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে করোনার বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় হোটেল-রিসোর্টগুলো নানা অফার দিচ্ছে।

  • ইউএস–বাংলার নতুন অফার—সকালে কক্সবাজারে যাবে, বিকেলে ফিরবেন।

  • নভোএয়ারের ছয় মাসের কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ।

  • ছোট-বড় সব রিসোর্টেও অফারের পর অফার।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

নানা ধরনের ছাড় দিয়ে পর্যটন খাতের ব্যবসার ক্ষতি পোষানোর চেষ্টায় নেমেছেন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে পর্যটক বা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এখন ভালো সময় চলছে। যদিও করোনার এ সময়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকার পর ১৯ আগস্ট খুলেছে। অনেকেই এক বছর ধরে ঘরে বসে থেকে হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছেন। তাই একটু ঘোরাঘুরির জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। তাঁদের জন্যই সুখবর। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর হোটেল-মোটেল এবং বিমান সংস্থাগুলো দিচ্ছে নানা ধরনের অফার। চলছে মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি। আছে মাসিক কিস্তিতে বেরোনোর সুবিধাও।

করোনার কারণে পর্যটনের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ নেই বললেই চলে। ফলে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অভ্যন্তরীণ পর্যটনকেন্দ্রগুলোই এখন ভরসা। তাই করোনার বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর এখন অনেকে ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। দেশের ভেতরে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সিলেট অঞ্চলই পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। এ ছাড়া বর্ষায় থইথই পানির কারণে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলও ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক সভাপতি আকবরউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে এত দিন সব রিসোর্ট-হোটেল বন্ধ ছিল। কিন্তু কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। এখন সব খুলে দেওয়ায় আশার আলো দেখছি।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকে বিদেশে যেতে পারছেন না। তাই দেশের পর্যটনশিল্পকে চাঙা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ভ্রমণে ছাড় বিমান সংস্থার

বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা গত রোববার থেকে প্রথমবারের মতো দিনব্যাপী প্যাকেজ ট্যুর ঘোষণা করেছে। সকাল সাতটার বিমানে কক্সবাজার গিয়ে বিকেলে আবার ফিরে আসা। সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারও এই প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত। এমনকি সারা দিনের জন্য গ্রেস কক্স স্মার্ট হোটেলে রুম থাকবে। বিমানে আসা–যাওয়া, খাওয়া ও হোটেলে বিশ্রাম মিলিয়ে পুরো প্যাকেজের মূল্য ১০ হাজার ৯৯৯ টাকা।

যাঁরা কক্সবাজারে রাত্রি যাপন করতে চান, তাঁদের জন্যও রয়েছে বিশেষ প্যাকেজ। তিন দিন ও দুই রাতের জন্য জনপ্রতি ১১,২৯০ টাকা। এই প্যাকেজের মধ্যে আছে বিমানে আসা-যাওয়া, তারকা মানের হোটেলে থাকা ও সকালের নাশতা এবং এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে আসা-যাওয়া। এই প্যাকেজের টাকা সুদবিহীন ছয় মাসের কিস্তিতেও দেওয়া যাবে।

জানতে চাইলে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে ভ্রমণপিপাসুরা
এখন বিদেশ যেতে পারছেন না। তাই অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে চাঙা করতে আমরা নানা ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।’

করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় কক্সবাজারে দিনে ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারি আরেক বিমান সংস্থা নভোএয়ার। আগে তাদের দিনে দুটি ফ্লাইট চলাচল করত। তা ছাড়া এ বিমান সংস্থারও রয়েছে মাসিক কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রাম ভ্রমণের প্যাকেজ। দুজনের দুই রাত তিন দিনের এই প্যাকেজের আওতায় বিমানভাড়া, হোটেলভাড়া, বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের শীর্ষ ২০টি ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে বিনা সুদে মাসিক কিস্তিতে ছয় মাসে ভ্রমণের টাকা পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। কক্সবাজারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি মাসিক কিস্তি ১ হাজার ৮৯৯ টাকা। কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ, সাইমন বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইজ, লং বিচ হোটেল, উইন্ডি ট্যারেস, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, নিসর্গ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং গ্রেস কক্স হোটেল এ প্যাকেজ সুবিধার আওতায় রয়েছে। একই ধরনের প্যাকেজে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে দুই রাত, তিন দিন থাকলে জনপ্রতি মাসিক কিস্তি পড়বে ২ হাজার ১৩৯ টাকা এবং সিলেটের ক্ষেত্রে ১ হাজার ৭৪৫ টাকা।

হোটেল-রিসোর্টেও বাহারি প্যাকেজ

বিমান সংস্থার বাইরে পাঁচ তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানের রিসোর্টগুলোতে চলছে ছাড়ের ছড়াছড়ি। হবিগঞ্জে অবস্থিত পাঁচ তারকা রিসোর্ট দ্য প্যালেস ১৭ হাজার টাকার এক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যার আওতায় রয়েছে স্বামী–স্ত্রী ও ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের এক রাত থাকা ও তিনবেলা খাওয়া। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই অফার চলবে। একই ধরনের প্যাকেজ রয়েছে শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টেও। ১৭ হাজার ৯৯৯ টাকায় এক রাত ও এক দিনের জন্য দুজন ও বাচ্চাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।