ব্যবসার পরিবেশ যাচাই করবে দেশীয় সংস্থা
দেশে ব্যবসার পরিবেশ কেমন, তা নিয়ে এখন থেকে প্রতিবছর দেশেই প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘ব্যবসার পরিবেশ সূচক’ তৈরি করবে। দেশের মধ্যে এ ধরনের সূচক তৈরির এটিই প্রথম উদ্যোগ। আগামী ৭ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।
সহজে ব্যবসা করার সূচক বা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বলতে এত দিন সবাই বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনকেই বুঝতেন। ২০০৫ সাল থেকে টানা ১৫ বছর বিশ্বের ১৯০টি দেশ নিয়ে নিয়মিতভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল বহুজাতিক সংস্থাটি। তবে প্রতিবেদনটি করতে গিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল, এটা প্রমাণিত হওয়ার পর এ বছর থেকে বহুল আলোচিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে সহজে ব্যবসা করার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮তম।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর ডুয়িং বিজনেসের প্রতিবেদন দিলেও অনেক দেশ নিজেদের মতো করে ব্যবসার পরিবেশ সূচক নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করে। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ভারত, চীনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বেসরকারিভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসার পরিবেশ কেমন তা জানা। কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, কোথায় সংস্কার আনা দরকার, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে এত দিন বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। নিজেদের উদ্যোগে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হতো না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার বাংলাদেশেও বেসরকারিভাবে ব্যবসার পরিবেশবিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে আমাদের প্রতিবেদন তৈরির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা এ সূচক তৈরির কাজ শুরু করি গত ডিসেম্বরে। আর বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বন্ধের ঘোষণা আসে গত সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের অনেক দেশই তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ব্যবসা পরিবেশ সূচক নির্ণয় করে। বাংলাদেশে এটি প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে।’
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ১০টি সূচকের ভিত্তিতে ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন তৈরি করত, যার মধ্যে ছিল ব্যবসা শুরু, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা, কর পরিশোধ, সীমান্ত বাণিজ্য, চুক্তি কার্যকর ও দেউলিয়াত্ব মীমাংসা সূচক।
এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশও ১০টি সূচকের ভিত্তিতে ব্যবসার পরিবেশ সূচক তৈরি করবে। এ ১০টি সূচকের মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৮টি সূচক। বিশ্বব্যাংকের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা ও নির্মাণ অনুমোদন-এ দুটি সূচক বাদ দিয়ে তার বদলে যুক্ত করা হয়েছে প্রযুক্তির অভিযোজন ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার তথ্য পাওয়ার সহজলভ্যতা সূচক।
দুটি বেসরকারি সংস্থা কেন এমন উদ্যোগ নিল, জানতে চাইলে মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যবসার পরিবেশ জানতে অপেক্ষা করতে হয় বৈশ্বিক সংস্থার ওপর। নিজেদের কোনো মূল্যায়ন নেই। সেই ভাবনা থেকেই এ উদ্যোগ।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন করার সময় ১৫০ আইনজীবী ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ওপর জরিপ করা হতো। ব্যবসায়ীদের সরাসরি প্রশ্ন করা হতো না। তা ছাড়া জরিপের তথ্য নেওয়া হতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে। এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ তাদের যে পদ্ধতি তৈরি করেছে, তাতে জরিপ করা হবে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে ৪০০ ব্যবসায়ীর ওপর। ধীরে ধীরে জরিপের পদ্ধতিতে আরও পরিবর্তন আসবে। মাসরুর রিয়াজ জানান, তাঁদের প্রতিবেদন হবে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ। সরকার তাঁদের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বলেও জানান তিনি।