ব্যবসায়ীরা শোনালেন নানা ভোগান্তির কথা

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

আসবাব রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা দেশীয় কোম্পানি হাতিলের ২২টি শোরুম আছে ভারতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি বিদেশে তাদের লিয়াজোঁ অফিসের খরচ মেটাতে বছরে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার নিতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা মানতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাতিলের। কারণ, এতগুলো শোরুমের ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য খরচ হয় আরও বেশি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার সংশোধন চেয়েছে হাতিল।

বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে গিয়ে কী ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির মুখোমুখি হন, সেটি জানতে গতকাল সোমবার এক কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দেশি-বিদেশি মোট ২১টি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রতিনিধিরা এ কর্মশালায় অংশ নেন।

জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী সদস্য ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব অভিজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা যাতে নিজেদের অসহায় না ভাবেন, সে জন্য তাঁদের সমস্যার কথা শোনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বিডার হাতে আছে, সেগুলো বিডা নিজেরাই সমাধান করবে। আর যেগুলো সরকারের অন্য দপ্তরের সমস্যা, সেসব সমস্যা নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হবে। অভিজিৎ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের সমস্যার কথা শুনব। প্রতি তিন মাস পরপর এ ধরনের বৈঠক হবে।’

কর্মশালায় অংশ নিয়ে হাতিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম হাফিজুর রহমান বলেন, ভারতে হাতিলের ২২টি শোরুম পরিচালনার খরচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে অনেক বেশি। ব্যবসার পরিধির ওপর ভিত্তি করে এ সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি। সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদেশে লিয়াজোঁ অফিস আছে ছোট পরিসরে। তাদের জন্য বছরে ৩০ হাজার ডলার যৌক্তিক। কিন্তু যাদের ব্যবসা বড়, তাদের জন্য ৩০ হাজার ডলার কিছুই নয়। তাই আমরা এ নির্দেশনা সংশোধনের প্রস্তাব করেছি।’

গতকালের বৈঠকে অংশ নিয়ে জার্মানিভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রতিনিধি জানান, অগ্রিম আয়কর নিয়ে তাঁদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুল্ক–কর ফেরত পাওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে সময়ও বেশি লাগে। তাই এ সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশি ব্যবসায়িক গ্রুপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিএসআরএম, আকিজ গ্রুপ, হাতিল, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ও আজিজুল হক অ্যাগ্রো বিজনেস। বিদেশি কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বার্জার পেইন্টস, জাপান টোব্যাকো ও সিঙ্গার।

জাপানের বৃহত্তম ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সিগারেট নির্মাতা জাপান টোব্যাকো বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের সিগারেট কোম্পানি কিনে নেয় ২০১৮ সালে। তখন এর পেছনে তারা খরচ করেছে ১৫০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। গতকালের কর্মশালায় অংশ নিয়ে জাপান টোব্যাকোর প্রতিনিধি জানান, ব্যবসা করতে গিয়ে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাঁদের। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে তাঁরা একটি মামলাও করেছেন। তাই বিষয়টির সুরাহা করতে বিডাকে অনুরোধ জানিয়েছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি।

জবাবে বিডা থেকে বলা হয়, যেহেতু প্রতিযোগিতা কমিশনে মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তাই বিডার এখন কিছু করার নেই। একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র (আইআরসি) পেতে সমস্যা হয়। এ সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ জানিয়েছে, ফেনীতে তারা কারখানার জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করেছে, সে জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলের হাতে চলে গেছে। তাই তারা এ জমিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিডার হস্তক্ষেপ চেয়েছে। আবার ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বিদ্যুৎ সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন।