বড়দের বেশি প্রণোদনা দিয়ে পক্ষপাত করা হয়েছে

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, সাধারণ ছুটি বা বিধিনিষেধের সময় দারিদ্র্যের হার সাময়িকভাবে বেড়ে যায়, কিন্তু এখন কমে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিনে বাঁ থেকে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল, তার ৬৭ শতাংশ পেয়েছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এসএমই ও কৃষি খাত পেয়েছে যথাক্রমে ২৬ ও ৫ শতাংশ। অথচ সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় এসএমই ও কৃষি খাতে। সে জন্য কর্মসংস্থানে গতি আসেনি।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশ নিজের মতো করে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিটি দেশের সরকার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করতে বা নিদেনপক্ষে ধরে রাখার লক্ষ্যেই জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক গোঁড়া ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে তোষণ করেছেন।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড সরকার মানুষের জীবন রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। সে জন্য দীর্ঘদিন সীমান্ত বন্ধ রাখার পাশাপাশি নানা বিধিনিষেধ জারি রেখেছে তারা। তবে মানুষ যেন আয় হারানোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে, সে জন্য দীর্ঘদিন প্রণোদনা দিয়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার মূল লক্ষ্য ছিল প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগানো। সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে খুবই কম। তার স্থায়িত্বও আবার বেশি দিন ছিল না। সে জন্য আয় হারানো মানুষের দুর্গতি কেবল বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিনে অর্থনীতিবিদ ও যুক্তরাজ্যের উলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এস আর ওসমানী এসব কথা বলেন।

এস আর ওসমানীর বক্তব্যের পর সম্মেলনে উপস্থিত অর্থনীতিবিদ ও পর্যবেক্ষকেরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই যে বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোকে প্রণোদনা দিল, তার মধ্য দিয়ে বোঝা গেল, সরকারের রাজনৈতিক পক্ষপাত ঠিক কোন দিকে।

তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেশের এসএমই খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

এক উপস্থাপনায় কাজি ইকবাল বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও বিক্রয় তলানিতে ঠেকেছিল। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ তা প্রায় প্রাক্-কোভিড পর্যায়ের কাছাকাছি চলে গেছে। তবে দেশের ক্লাস্টারভিত্তিক বা গুচ্ছ এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্ন এসএমইদের চেয়ে এগিয়ে আছে। গুচ্ছভিত্তিক এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যদের চেয়ে ঋণ পেয়েছে বেশি। আর বিচ্ছিন্ন এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। সে জন্য পুনরুদ্ধারে তারা পিছিয়ে আছে।

এসএমই খাতের এই পুনরুদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন পিপিআরসি-বিআইজিডির জরিপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সাধারণ ছুটি বা বিধিনিষেধের সময় দারিদ্র্যের হার সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে, কিন্তু এখন দারিদ্র্যের হার অত বেশি হওয়ার কথা নয়।

এ প্রসঙ্গে কাজি ইকবাল বলেন, জরিপ কখন ও কীভাবে করা হচ্ছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সরকার যে বিস্তারিত পদ্ধতিতে খানা আয়–ব্যয় জরিপ করে, তা হয়তো অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার ফোনে জরিপ করলে অনেক কিছু ধরা না–ও পড়তে পারে। এ ধরনের জরিপ থেকে দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান বের করে আনা কঠিন; বরং তাকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।

এই পর্যায়ে দর্শকদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করেন, বিচ্ছিন্ন এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যে পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে আছে, সরকার তাদের কীভাবে সহায়তা করতে পারে। জবাবে কাজি ইকবাল বলেন, সবাইকে ক্লাস্টারে নিয়ে আসাই সমাধান। সরকারও এ লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের শিল্পনীতিতেও তা আছে।

দিনের শেষ অধিবেশন ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুবই সামান্য কার্বন নিঃসরণ করে। তারপরও বিভিন্ন সময় জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ বিভিন্ন অঙ্গীকার করেছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে চাপ দেওয়া।

সম্মেলনের প্রথম দিনে বিভিন্ন অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ।